ডুবতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল

33

স্টাফ রিপোর্টার
সিলেটে ফের বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সিলেটের কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। চারদিন ধরে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে সিলেটের বিভিন্ন হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বাড়ছে নদীর পানি। সিলেটের সুরমা নদী ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শনিবার বিকেলে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা ধরা হয় ১২.৭৫ সেন্টিমিটার। এছাড়াও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে গোলাপগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। সুনামগঞ্জের বেশ কয়েকটি এলাকা পানির নিচে। হাওরের পানি উপচে গ্রামের রাস্তা অতিক্রম করেছে।
ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটের উজানে ভারতের মেঘালয় রাজ্যে। ফলে নামছে ঢল। ঢল আর বৃষ্টিতে সিলেটের নদনদীর পানি বেড়ে চলছে। বিপদসীমা ছুঁইছুঁই করছে পানি। ঢল আর বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চলতি সপ্তাহেই মাঝারি ধরনের বন্যা হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
এর আগে গতবছর সিলেটে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হয়। এতে তলিয়ে গিয়েছিলা সিলেটের ৭০ শতাংশ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্থ হন জেলার প্রায় সব মানুষ। বন্যায় ভেঙে যায় প্রায় ১০ হাজার ঘরবাড়ি। গতবারের বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্থরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ১৩৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৭৫ মিলিমিটার। এর আগে বুধবার সকাল ৬ টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৭১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। সিলেটের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা সিলেটে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য সবাইকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়ি ঢল নামতে পারে।
বর্ষণ ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে বন্যার আশঙ্কা থেকে বৃহস্পতিবার সিলেটের জেলা প্রশাসন জরুরি সভা করে আগাম বন্যার প্রাথমিক প্রস্তুতিও নিয়েছে। ত্রাণ ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান।
আমাদের গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি কে.এম লিমন জানান টানা বৃষ্টিপাতের কারণে গত বছরের ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় আবারও বন্যার শঙ্কায় সাধারণ মানুষ। এতে নিম্মাঞ্চলের মানুষের মাঝে নতুন করে আবারও বন্যার আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ডাউকি, সারী ও পিয়াইন নদীর পানি আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও এখনো নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সারী-গোয়াইনঘাট ও রাধানগর-গোয়াইনঘাট এবং সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যানবাহন চলাচলে কিছুটা বিঘিœত হচ্ছে।
এদিকে, পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে মানুষের জান মাল যাতে রক্ষা পায় সেই লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫৬টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে, এখনও মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠার খবর পাওয়া যায়নি।
গত বুধবার সকাল থেকে উপজেলার প্রধান সড়কের বেশ কিছু স্থানে পানি উঠেছে। এতে সারী-গোয়াইন, গোয়াইনঘাট-রাধানগর-জাফলং সড়কের অধিকাংশ স্থানে পানি উঠায় যানবাহন চলাচলে বিঘিœত হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জনদুর্ভোগ বাড়ছে। দিনভর বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত পানি ক্রমশ বেড়েছে।
বুধবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো গুড়ি গুড়ি আবার কখনো মুষলধারে। এতে বৃষ্টির পানি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাটে বৃষ্টির পানি জমে কাঁদা জলে পরিনত হচ্ছে। বিঘিœত হচ্ছে যান চলাচল। ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে থাকে। সারী, গোয়াইন, ডাউকী ও পিয়াইন নদে পানি হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার সবক’টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। উপজেলা সদরের প্রধান তিনটি সড়কসহ তলিয়ে যায় গ্রামীণ জনপদের অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাট। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পাহাড়ে লাগাতার বৃষ্টিপাত হলে বন্যা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাহমিলুর রহমান জানান, উপজেলার সবক’টি ইউনিয়নে পানি উঠতে শুরু করেছে। এখনো বন্যায় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। নিম্মাঞ্চলের মানুষদের আগে থেকেই সতর্ক করা হচ্ছে। এছাড়াও মানুষের জানমাল রক্ষায় উপজেলায় ৫৬টি বন্যা আশ্রয়ন কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে টানা কয়েক ঘণ্টার বর্ষণে হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এই বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন শহরবাসী। এদিন দুপুরে হবিগঞ্জ সার্কিট হাউজ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), পুলিশ সুপারের (এসপি) বাস ভবন, জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বাস ভবন এবং গণপূর্ত বিভাগের কার্যালয়ের ভেতর পানিতে থই থই। এ দপ্তরগুলোর কোনোটির ভেতরে হাটু সমান আবার কোনোটির ভেতরে উরু সমান পানি দেখা গেছে।
এছাড়া যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। আর কয়েকশ দোকান এবং বাড়িঘরেও পানি ঢুকে যেতে দেখা গেছে।
শায়েস্তানগর এলাকার বাসিন্দা নূরুল হক কবির বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি উঠে যায়। অনেক বাসাবাড়িতেও পানি। এ অবস্থা থেকে শহরবাসীকে মুক্তি দিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি।
শায়েস্তানগর কাঁচা বাজারে আসা পুরান মুন্সেফীর ঝর্ণা আক্তার বলেন, শায়েস্তানগর পয়েন্টে বৃষ্টি হলেই পানি ওঠে। আশপাশের রাস্তায় যেসব ময়লা ফেলে রাখে, বৃষ্টি হলে সেগুলো পানিতে ভাসে। এই পানি পায়ে লাগলে পরে চুলকায়।
এদিকে পানি বাড়ছে হবিগঞ্জের কালনী এবং কুশিয়ারা নদীতেও। এ জন্য হাওরাঞ্চলের লোকজনের কপালে এখন চিন্তার ভাজ।
যোগাযোগ করলে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কৃষক ওয়ারিশ মিয়া বলেন, নদীর পানি দুইদিনে প্রচুর বেড়েছে। আর কয়েকদিন এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যার হওয়ার আশঙ্কা আছে।