উন্নতি হয়েছে বেকারত্বের

11

দেশে বেকারত্ব পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। অর্থাৎ বেকারের সংখ্যা এখন আগের তুলনায় কমেছে। বিবিএসের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে এখন মাত্র ২৬ লাখ ৩০ হাজার বেকার। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে ২০১৭ সালের জরিপে বেকার ছিল ২৭ লাখ। সুতরাং পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে বেকারত্ব পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এ জরিপের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করেছে। আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে এ প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বেকার সংখ্যার হিসাবটি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী করে বিবিএস। আইএলওর সংজ্ঞা বলছে, ৩০ দিন ধরে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি সর্বশেষ ৭ দিনে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টাও কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হবে।
জরিপে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে বেকারত্ব ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। সর্বশেষ জরিপ বলছে, এখন বেকারত্ব কমে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। আর বেকারদের মধ্যে ১৬ লাখ ৯০ হাজার পুরুষ এবং ৯ লাখ ৪০ হাজার নারী। এ ছাড়া প্রান্তিকভিত্তিক বেকারত্বের হিসাবও জরিপে উঠে এসেছে। সেখান দেখা গেছে, জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে মানুষ সবচেয়ে বেকার থাকেন। ওই সময়ে গড়ে সাড়ে ২৯ লাখ মানুষই বেকার থাকেন। আর অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে বেকার থাকেন সবচেয়ে কম, ২৩ লাখ ২০ হাজার নারী-পুরুষ। অর্থাৎ এই সময়ে কাজের সুযোগ বেশি থাকে, এই বার্তাই দেয়। এ ছাড়া এপ্রিল-জুন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে বেকার লোকের সংখ্যা থাকে যথাক্রমে ২৫ লাখ ৬০ হাজার এবং ২৬ লাখ ৫০ হাজার।
বেকারের সংখ্যা বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজের সুযোগ পেলে ওই ব্যক্তিকে বেকার ধরা হবে না। এই সংজ্ঞা আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কোনোভাবেই অর্থবহ নয়। এগুলো শিল্পোন্নত দেশের জন্য প্রযোজ্য। তাই বাংলাদেশে আন্ডার ইমপ্লয়েড বা ছদ্মবেকার কত আছে, তা জানতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান বাড়তে হবে। কৃষি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির অর্থ হলো, যারা কোনো কাজ পান না, তারা কৃষি খাতে যান। কৃষি খাতে এমনিতেই উৎপাদনশীলতা কম। শিল্প ও সেবা খাতে কর্মসংস্থান বাড়াতে হলে এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় সপ্তাহে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজের সুযোগ পেলে জীবনধারণ করা কঠিন। প্রতিটি শ্রমশক্তি জরিপে আন্ডার ইমপ্লয়েড বা ছদ্মবেকার নামে একটি হিসাব থাকে। তারা সপ্তাহে ৩৫ ঘণ্টার কম কাজের সুযোগ পান কিংবা পছন্দমতো কাজের সুযোগ পান না। তাদের অনেকেই টিউশনি, বিক্রয়কর্মী কিংবা উবার-পাঠাও চালকের মতো কাজ করে জীবন ধারণ করেন। এবার শ্রমশক্তি জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে সেই হিসাব দেয়া হয়নি। ২০১৭ সালের জরিপে এমন ছদ্মবেকারের সংখ্যা ছিল ৬৬ লাখ।
বেকারত্ব সম্পর্কে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম সচিব দীপংকর রায় বলেন, ‘আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ী সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ না পেলে বেকার হিসেবে ধরা হয়। এমনকি নিজ পরিবারের ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদন করলেও তা কাজ হিসেবে ধরা হবে। এর মানে, উৎপাদনমুখী কাজে মজুরি না পেলেও তা বেকার হিসেবে ধরা হবে না। নিজের পরিবারের জন্য মুরগি পালন করলেও তারা বেকার নন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১ লাখ ২৩ হাজার ২৬৪টি খানা থেকে বছরব্যাপী তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ওই সব তথ্যের ভিত্তিতে শ্রমশক্তির জরিপটি করা হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি শ্রমশক্তি জরিপের মাধ্যমে শ্রমবাজারের তথ্যের উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ বছরের জরিপটি করা হয়। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে আবারও জরিপটি করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রকল্প পরিচালক আজিজা রহমান জরিপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এখন থেকে প্রতি তিন মাস পর পর শ্রমশক্তি জরিপের প্রান্তিকভিত্তিক ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।