রেমিটেন্স বাড়াতে পদক্ষেপের বাস্তবায়ন

5

 

বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মানুষ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে প্রবাসী আয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এমন বিষয় সামনে এসেছে যে, প্রবাসী আয় বেড়েছে। যা স্বাভাবিকভাবেই আশাব্যঞ্জক বলেই প্রতীয়মান হয়। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
তথ্য মতে, হ্রাস-বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় মে মাসের ১২ দিনে প্রবাসী আয় খানিকটা বেড়েছে। প্রবাসীরা মে মাসের প্রথম ১২ দিনে ৭৭ কোটি ৩৯ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন- যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। আর এই তথ্য উঠে এসেছে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, আগের মাস এপ্রিলে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স কিছুটা কম পাঠিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিল, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসার ভাটা পড়ল। এপ্রিলে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৮ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার। আর এটাও সামনে এসেছে যে, চলতি মাসের ১২ দিনে দেশে আসা প্রবাসী আয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে পুরো মে মাসে আসবে ১৯৩ কোটি ৫০ হাজার ডলার- যা এপ্রিলের চেয়ে বেশি।
এটা আমলে নেওয়া দরকার, সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত রোজার শুরুতেই অনেক প্রবাসী পুরো মাসের জন্য অর্থ পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এ কারণে এপ্রিল মাসে প্রবাসী আয় কমে যায়। মার্চ মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ২০২ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আর রেমিট্যান্স আয় দেশে পাঠানোর এটাই ঠিক ধারা বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন মতও উঠে এসেছে যে, এপ্রিল মাসে ঈদের লম্বা ছুটির কারণে প্রবাসী আয় কম এসেছে। আর চলতি মে মাসে আবার ঠিক হয়ে যাবে।
আমরা বলতে চাই, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। কেননা, এটা এড়ানো যাবে না, দেশের অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। এর আগে এটাও জানা গেছে, রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে- যা ইতিবাচক। বিশেষ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এমন আলোচনা সামনে এসেছে। আমরা মনে করি, রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।
এছাড়া কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পাশাপাশি নতুন বাজার এবং দক্ষ জনশক্তির বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। প্রবাসে দক্ষ জনশক্তি যত বেশি পাঠানো সম্ভব হবে ততই দেশের সুনাম বাড়বে এবং জনশক্তি রপ্তানিও বৃদ্ধি পাবে বলেই মনে করা সঙ্গত। ফলে সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটা মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশের অথর্নীতি যে কয়টি ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে তার মধ্য রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উলেস্নখযোগ্য। ফলে এই খাতের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া এটা কোনোভাবেই ভুলে যাওয়া যাবে না যে, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি করা যায়। ফলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি দেশকে আরও অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিতে দক্ষ জনশক্তির বিষয়টি আমলে নিয়ে এ ব্যাপারেও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। ফলে প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা আবশ্যক। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও। এছাড়া যেসব দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত, তাদের দেখভালের ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে গৃহীত উদ্যোগের বাস্তবায়নসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।