সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে ভারতীয় চিনি
স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জের ছাতকে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিনই অবৈধভাবে ভারতীয় চিনি দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরা। সীমান্তের বিভিন্ন রুট ব্যবহার করে সিএনজি অটোরিকশা, কাভার্ডভ্যান, পিকআপের মতো ছোট গাড়ি দিয়ে চিনিসহ ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করছে তারা।
চোরাকারবারিরা মাঝেমাঝে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও বেশিরভাগ সময়ই তারা সীমান্তরক্ষী ও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেদারছে চোরাই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। দু’চারজন ধরা পরলেও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত মুল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চোরাই মালামালের সাথে যারা ধরা পড়ছে তারা কেবলই শ্রমিক শ্রেণির, দিনমজুর অথবা গাড়ির চালাক-হেলপার। লক্ষ-লক্ষ টাকার চোরাই ব্যবসার সাথে জড়িত গডফাদারদের কেন আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না- এ প্রশ্নই এখন সাধারণ মানুষের মধ্যে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতীয় চিনির তিনটি বড় চালান আটক করতে সক্ষম হয়েছে থানা পুলিশ। পৃথক তিনটি অভিযানে ৪ হাজার ৫০০ কেজি ভারতীয় চিনিসহ ৭টি সিএনজি অটোরিকশা ও একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করেছে পুলিশ। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ৭ জনকে আটক করে। পরে পৃথক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের সুনামগঞ্জ জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
গত ১৫ মে সোমবার ভোরে শহরের সুরমা ব্রিজের টোল প্লাজা এলাকা থেকে ৫০ কেজি ওজনের ৪০ বস্তা ভারতীয় চিনিসহ ৪টি সিএনজি অটোরিকশা আটক করে পুলিশ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ছাতক থানার এসআই নাজমুল হাসান শেখ অভিযান চালিয়ে চিনি ভর্তি ৪টি অটোরিকশা আটক করেন। চোরাকারবারিরা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ভারতীয় চিনি সিএনজি অটোরিকশা যোগে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ধাওয়া করে গাড়িসহ ২ হাজার কেজি চিনি আটক করতে সক্ষম হয়। আটককৃত চিনির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা। আটককৃত সিএনজি অটোরিকশাগুলোর মধ্যে ৩টিই নাম্বারবিহীন। একটি সিএনজি-অটোরিকশার নাম্বার হলো সুনামগঞ্জ ট-১১-৩২৫০।
চোরাকারবারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের গোবিন্দনগর-ল²ীপুর গ্রামের মৃত মছকন্দর আলীর পুত্র শানুর আলী (৪০), গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের দিঘলী-দক্ষিণ চাকলপাড়া গ্রামের মৃত ইলিয়াছ আলীর পুত্র মাসুক মিয়া (৩৫) ও কালারুকা ইউনিয়নের খাইরগাঁও গ্রামের মৃত কলমদর আলীর পুত্র কামাল উদ্দিনকে (২৬) আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ছাতক থানার এসআই নাজমুল হাসান শেখ বাদী হয়ে পলাতক কালারুকা ইউনিয়নের পুরাতন লম্বাহাটির বাসিন্দা রুনেলসহ (২২) ৪ জনের বিরুদ্ধে ছাতক থানায় একটি মামলা (নং-১৬) দায়ের করেন।
গত ১০ মে রাতে গোবিন্দগঞ্জ বাজার থেকে ২০ বস্তায় ১ হাজার কেজি চিনিসহ একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করে পুলিশ। চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মামুন মিয়া ও মোজাম্মিল আলী নামে দু’ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এদিকে, ১১ মে দুপুরে জাউয়া বাজার থেকে ৩০ বস্তায় দেড় হাজার কেজি ভারতীয় চিনিসহ ৩ ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ।
চোরাই চিনি পরিবহনের জন্য তিনটি অটোরিকশা আটক করা হয়। চোরা কারবারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আজিজুর রহমান ফয়সল, ইয়াছিন আহমদ ও উজ্জ্বল খানকে আটক করে জেল হাজতে পাঠায় পুলিশ। এসব পুলিশি অভিযানে চোরা কারবারিরা ভারতীয় চিনি আমদানির ক্ষেত্রে কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ছাতক থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।