মো.শাহজাহান মিয়া, জগন্নাথপুর থেকে
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। জমিতে বাম্পার ফসল পেয়ে কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি। এ যেন হাওর ও মাঠে-ময়দানে সেই চিরচেনা গ্রাম বাংলার নয়নাভিরাম দৃশ্য ভেসে উঠছে। প্রখর রোদে চারদিকে বাড়ছে বৈশাখের ব্যস্ততা। বিস্তৃত হাওরজুড়ে পাকা-আধাপাকা ধান বাতাসের তালেতালে দুলছে। ধানের মৌমৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। কার আগে কে ধান কেটে গোলায় তুলবেন, এ নিয়ে হাওরে কৃষকদের মাঝে তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে। প্রযুক্তির আশির্বাদে এখন ধান কাটা ও মাড়াই করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। এর মধ্যে কেউ শ্রমিক দিয়ে ও আবার কেউ মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। এক কথায় যে যেভাবে পারছেন, জমি থেকে ধান কেটে গোলায় তুলছেন।
বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় নলুয়ার হাওর সহ অন্যান্য হাওরে ধানকাটা, মাড়াই করা, হাওর থেকে বাড়িতে নেয়া, মাঠে শুকানো ও সবশেষে গেলায় তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণী সহ শ্রমিকরা। প্রথমে আগাম জাতের ছোট ধানের ফলন নষ্ট হওয়া ও ভারি বৃষ্টিপাতে জমিতে জলাবদ্ধতা লেগে যাওয়া সহ নানা কারণে কৃষকরা রীতিমতো নিরাশ ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
তবে চলতি সপ্তাহে কাঠফাটা রোদে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায়। প্রচন্ড রোদের প্রভাবে দ্রæত পাকতে শুরু করে জমির ধান। যে কারণে গত কয়েক দিন ধরে উপজেলার সকল হাওরে কমবেশি ধান কাটার ধুম পড়েছে। এর মধ্যে এবার জমিতে যারা বড় ও মাঝারি জাতের ধান আবাদ করেছিলেন তারাই বাম্পার ফলন পাচ্ছেন। আর যারা অল্প সময়ের মধ্যে সবার আগে ধান কাটার আশায় ছোট ধান আবাদ করেছিলেন, তারাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে স্থানীয় কৃষকরা জানান।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, এবার জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর বোরো জমি আবাদ হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে পুরোদমে ধান কাটা চলছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার অধিক ফলন কৃষকদের গোলায় উঠবে।
তাহিরপুর থেকে প্রতিনিধি জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ শনি হাওরে বোরো ধান কাটা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলার শনির হাওর পাড়ে জয়নগর গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিনের এক কিয়ার জমির ধান কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ধান কাটা উৎসব উদ্বোধন করা হয়।
ধান কাটা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) আসাদুজ্জামান রনি, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসান উদ দৌলা, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাজহারুল হক মজুমদার, সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জুনাব আলী, উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি রমেন্দ্র নারায়ন বৈশাখ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, আবুল কাশেম, উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
কৃষক জসিম উদ্দিন জানান, এবার দেশীয় জাতের (লাখাই) ধানে কিয়ার প্রতি ১২ থেকে ১৫ মণ ফলন হয়েছে। পেকে যাওয়া ধান কাটছেন কৃষক। আজ আমার জমির ধান কেটে আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয়।