মানুষ হলো আশরাফুল মাখলুকাত, মানে সৃষ্টির সেরা জীব। কিন্তু সেই মানুষই এমন সব ঘটনার জন্ম দেয়, এমন কদর্য আচরণ করে যে আমরা বলতে বাধ্য হই, এ নিতান্ত অমানুষের কাজ। মানুষ নামের কলঙ্ক বর্তমান সমাজে কম নেই। দেশে দেশে বহু অমানুষের সন্ধান পাওয়া যায়। যারা অবিবেচকের মতো কাজ করে সমাজে নেতিবাচক ঘটনার জন্ম দেয়। মানুষ যে অমানুষ হয়ে ওঠে তার পেছনে সমাজ ও রাষ্ট্রের ভূমিকার কথা অনেকেই বলে থাকেন। শেরপুরের নালিতাবাড়িতে আপন ভাইয়ের ছেলেকে দুহাত পেছনে বেঁধে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখার সংবাদ পড়ে মানুষ শিউরে উঠেছে। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিষয়টি। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় আপন ভাতিজা নূর ইসলামের (৩৫) দুই হাত পেছনে বেঁধে হত্যার উদ্দেশ্যে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখে তারই আপন চাচা আলিমদ্দিনসহ পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে নূর ইসলামকে উদ্ধার এবং ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকেলে উপজেলার দক্ষিণ তন্তর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনা আমাদের সমাজে আগেও ঘটেছে। এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উপেক্ষা করা চলে না। সমাজের কোথাও নিশ্চয়ই বড় ধরনের ভারসাম্য বিপন্ন হয়েছে। চিড় ধরেছে মূল্যবোধের দেয়ালে। মানুষ মানুষের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে দানবিক সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে। একখ- জমির চাইতে যে পারিবারিক সৌহার্দ-সম্প্রীতি অনেক বড়, রক্তের সম্পর্কে সম্পর্কিত ব্যক্তি যে মানুষের সবচেয়ে আপনজন- এসব শুভবোধ ও সহজাত মানবিক বিষয় মানুষের ভেতর থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের অবশ্যই পারিবারিক মূল্যবোধের ইতিবাচক দিকগুলোকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বাড়ানোর জন্য শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির বড় ভূমিকা রয়েছে। সেটিকে কাজে লাগানো চাই। নালিতাবাড়ির মতো অমানবিক ঘটনা যেখানেই ঘটুক না কেন, সেখানে অবিলম্বে সামাজিক ও আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষ অবিনশ^র নয়, তার মৃত্যু হবেই। আর মৃত্যুর পর কেউ জমি-জমা সম্পদ-সম্পত্তি নিয়ে পরকালে যেতে পারবে না, এটিও মনে রাখা চাই। সর্বোপরি মনে রাখা চাইÑ মানুষ মানুষের জন্য।