রাজনীতির এক উজ্জ্বল তারকার পতন ॥ আমি বিশ্বস্ত এক সহযোদ্ধাকে হারালাম – শেখ হাসিনা ॥ আজ সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থান মসজিদে জানাযা শেষে দাফন

67

কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাজনীতির আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন ঘটল। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর স্ট্রোকে তাঁর জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে উঠেছিল, সেই সঙ্কট আর কাটল না। তিনি এখন অনন্ত লোকের বাসিন্দা। থেমে গেল রাজনৈতিক অঙ্গনের এক কীর্তিমান পুরুষের পথচলা। হঠাৎ করেই নিভে যাওয়া রাজনৈতিক অঙ্গনের এই দ্বীপশিখাটির নাম শহীদ জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সুযোগ্য সন্তান, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ নাসিম। শনিবার তাঁর জীবনাবসানের মধ্য দিয়ে পিতার মতোই সাহসী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি অবিচল, ত্যাগী ও রাজপথের এক সাহসী যোদ্ধার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনেরও ইতি ঘটল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছিলেন ছয় বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তখন দ্রুত তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারও করা হয়। দীর্ঘ ১০ দিন ধরে ওই হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে মৃত্যুর কাছেই হার মানতে হলো রাজনীতির এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে। শনিবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন মোহাম্মদ নাসিম (ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন। শনিবার রাতে তাঁর মরদেহ বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়।
শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী যেভাবে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে কাজ করে গেছেন, তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নাসিমও আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে সামনে থেকে লড়েছেন। তাই বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের মৃত্যু সংবাদে রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। মৃত্যু সংবাদে আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ছুটে যান হাসপাতালে, অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সাত্মনা দেন তাঁর পরিবারের শোকসন্তপ্ত সদস্যদের।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, তিনি একজন বিশ্বস্ত সহযোদ্ধাকে হারিয়েছেন। পিতার মতোই মোহাম্মদ নাসিম আমৃত্যু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। করোনা সঙ্কটকালেও শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও ছুটে গেছেন তাঁর জন্মভিটা সিরাজগঞ্জের কাজীপাড়ায়, নিজ হাতে ঘুরে ঘুরে তাঁর প্রিয় এলাকায় কষ্টে থাকা মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন ত্রাণসামগ্রী। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনার কারণে তাঁর মরদেহটি শেষ দেখার সুযোগ পাচ্ছেন না কাজীপাড়ার মানুষ। আজ রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থানে মোহাম্মদ নাসিমের নামাজে জানাযা শেষে বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে। যেখানে চিরনিন্দ্রায় শায়িত আছেন ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত পিতা শহীদ জাতীয় নেতা এম মনসুর আলী ও মাতা আমেনা মনসুর। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মোহাম্মদ নাসিমকে বনানী কবরস্থানে তাঁর মা আমেনা মনসুরের কবরেই চিরনিন্দ্রায় শায়িত করা হবে।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডাঃ এস এ মালেক, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচ টি ইমাম, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বেগম মতিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রী সভার সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও বিবৃতি দিয়ে শোক জানিয়েছেন মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে।
গত ১ জুন রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি হন মোহাম্মদ নাসিম। পরে রাতে তঁর করোনা ভাইরাস পজেটিভ আসে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত অবস্থায় গত ৫ জুন ভোরে মারাত্মক স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। পরে জরুরীভাবে তাঁর মস্তিষ্কে অপারেশন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের একটি মেডিক্যাল বোর্ড মোহাম্মদ নাসিমকে সুস্থ করে তোলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। পরে দু’বার করোনা টেস্টে নেগেটিভ রেজাল্ট আসে। কিন্তু সকলের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে শনিবার চিরনিদ্রায় ঢলে পড়েন মোহাম্মদ নাসিম।
মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে হাসপাতালে ছুটে যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, এস এম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তাঁরা প্রয়াত নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেন। প্রথমে হেলিকপ্টারযোগে মোহাম্মদ নাসিমের মরদেহ আজ রবিবার কাজীপাড়ায় নেয়ার কথা হলেও করোনা সংক্রমণের কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত সেই কর্মসূচী বাতিল করা হয়।
হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমান সাংবাদিকদের জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সিপাহসালা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ভাই আর নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তাঁর মৃত্যুতে আওয়ামী লীগসহ সারা দেশবাসী আজ শোকাহত। শত মানুষের ভিড় দেখছেন হাসপাতালেও। কাজীপুরের শোকাহত মানুষেরা চাতক পাখির মতো আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে আমরা তাঁর মরদেহ আমরা সিরাজগঞ্জের কাজীপাড়ায় নিতে পারছি না। জানাযাতে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি আমাদের কাছে কাম্য নয়। যে যেখানে আছেন সেখান থেকে আপনারা দোয়া করবেন। আর হাসপাতালে ভিড় করে নিজেদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন না, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
তিনি আরও বলেন, সারাবিশ্ব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত, বাংলাদেশেও জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রিয় নেতা নাসিম ভাইয়ের চলে যাওয়ায় আমরা আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সব কর্মসূচী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালন করব। আপনারা যে যেখানে আছেন সবাই দোয়া করবেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে যেন বেহেশত নসিব করেন। মোহাম্মদ নাসিমের জানাযা আজ (রবিবার) সকাল সাড়ে ১০টায় বনানী কবরস্থান মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে এবং বনানী কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে।
এরপর মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ নাসিমের বড় ছেলে সাবেক এমপি প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের সকলের প্রিয় মানুষ আমার পিতা মোহাম্মদ নাসিম মৃত্যুবরণ করেছেন। আমার বাবা আমার দাদার (জাতীয় নেতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী) মতোই তাঁর সারাজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। বাবার মৃত্যুর পরেও আমাদের পরিবারের সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে মানুষটি দেশের মানুষের জন্য আজীবন রাজনীতি করেছেন, সে মানুষটির মৃত্যুর পর দেশের মানুষের কোন ক্ষতি হোক এ রকম কোন কিছু আমরা হতে দিতে পারি না। তাই করোনা মহামারীর কারণে সিরাজগঞ্জের লাখ লাখ মানুষের চোখের জলকে উপেক্ষা করে হলেও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রবিবার আব্বার জানাযা বনানীর কবরস্থান মসজিদে করা হবে। আমি সকলকে অনুরোধ করব, আপনারা নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মন থেকে দোয়া করবেন, দূর থেকে দোয়া করবেন।’
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মোহাম্মদ নাসিম ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর উপজেলায় জাতীয় নেতা এম মনসুর আলী ও মা মোসাম্মাৎ আমেনা মনসুরের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এম মনসুর আলী স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রী সভায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িতও¡ পালন করেছিলেন। মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। গত শতকের ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া যুবলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য হন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর কারাগারে ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীকেও হত্যা করা হলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মোহাম্মদ নাসিম। তখন তাঁকে কারাগারেও যেতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘ ২১টি বছর সামরিক ও খালেদা জিয়া বিরোধী আন্দোলনে রাজপথের সাহসী যোদ্ধা ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। এ কারণে রাজপথে তাঁকে বারবার নির্যাতনের শিকার হতে হয়, কারাগারেও যেতে হয় বারংবার। ১৯৮৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম। তখন সংসদে বিরোধীদলীয় হুইপের দায়িত্ব পান তিনি। তখন তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক। এরপর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে সারাদেশে সংগঠনকে গড়ে তোলার দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ১৯৯১ সালের সংসদে বিরোধী দলের প্রধান হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম।
এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। এর মধ্যে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিম দুটি করে আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময়ে মোহাম্মদ নাসিমকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছরের মার্চে তাঁকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৯ সালে মন্ত্রী সভায় রদবদলে মোহাম্মদ নাসিম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
ওয়ান-ইলেভেনের সামরিক সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথমেই রাজপথের সাহসী যোদ্ধা মোহাম্মদ নাসিমকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করে। কারাগারে থাকা অবস্থাতেই প্রথম দফায় স্ট্রোক করেন এবং বাম সাইড অবশ হয়ে যায় তাঁর। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও সেবার আইনি জটিলতার কারণে নির্বাচন করতে পারেননি মোহাম্মদ নাসিম। তাঁর আসনে বিজয়ী হন তাঁর বড় ছেলে প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয়। তবে পরের মেয়াদে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসলে মোহাম্মদ নাসিমকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সবশেষ ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় সংসদে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ছাড়াও মোহাম্মদ নাসিম নির্বাচনী জোট কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র হিসেবে আমৃত্যু নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে গেছেন।
বিভিন্ন মহলের শোক : মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে আরও শোক প্রকাশ করেছেন- প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে এম আবদুল মোমেন, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আবদুল্লাহ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সংসদে বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, সংসদের চিফ হুইপ নুর ই আলম চৌধুরী লিটন, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, সংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান প্রমুখ।
আরও শোক জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আবদুস সবুর, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর রিক্রম, সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির ব্যারিষ্টার আরশ আলী, ডা. শাহাদাৎ হোসেন, নুরুর রহমান সেলিম, অধ্যাপক ডাঃ শহীদুল্লাহ সিকদার, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ওয়াজেদুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ইসলামিক গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এমএ আউয়াল, জেএসডির আসম আবদুর রব, বিএনপির ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের রেজা কিবরিয়া, ঐক্য ন্যাপের পংকজ ভট্টাচার্য, জাকের পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা আমীর ফয়সল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল বাহার মজুমদার টিপু, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগসহ অজস্র রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
আরও শোক জানিয়েছেন, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হুমায়ুন কবির, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ চন্দ্র, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, মহিলা লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ক্রিক, বাংলাদেশ শান্তি পরিষদ সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টূ এবং সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাজাহান খান, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মহাসচিব ডাঃ ইশতেহামুল হক চৌধুরী, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান ডাঃ দিলীপ রায়, আইইবি’র প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী আবদুস সবুর, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মনজুরুর মোর্শেদ, এফবিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, ঢাকাস্থ সিরাজগঞ্জ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি শাহনেওয়াজ দুলাল ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রনি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সারাহ বেগম কবরী, সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা প্রমুখ।
সিরাজগঞ্জে সাত দিনের শোকের কর্মসূচী : সিরাজগঞ্জ থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার বাবু ইসলাম জানান, এলাকার মাটি ও মানুষের নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যু সংবাদে পুরো জেলায় শোকের ছায়া নেমে পড়ে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে জেলার নেতাকর্মীরা জেলা ও কাজীপুর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জমায়েত হয়। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলাব্যাপী ৭ দিনের শোকসহ নানা কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে- মোহাম্মদ নাসিম স্মরণে জেলার সকল ইউনিটের দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণ। আগামী তিন দিনব্যাপী মরহুম মোহাম্মদ নাসিমের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পবিত্র কুরআনখানির আয়োজন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের গৃহীত কর্মসূচী পালনের আহ্বান জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডাঃ হাবিবে মিল্লাত এমপি।