বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার জন্য বছরের পর বছর তাগাদা দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এখনো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সেই স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেনি। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আধাআধি স্থানান্তর করেছে, অর্থাৎ স্থায়ী, অস্থায়ী দুই জায়গায়ই শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে ইউজিসি কিছুটা কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ইউজিসি চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস ছাড়া অন্য কোনো ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ভর্তি না করতে বলা হয়েছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে। স্থানান্তর প্রক্রিয়া চলমান থাকায় এবং লিখিত আবেদন করায় ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষাসহ সম্পূর্ণ কার্যক্রম স্থানান্তরের জন্য তিন থেকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আরো আগেই ইউজিসির এমন কঠোর সিদ্ধান্ত দেওয়া প্রয়োজন ছিল।
এটা ঠিক, ই্উজিসি আগেও ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করাসহ অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদন-নিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সিদ্ধান্ত শর্তসাপেক্ষে প্রত্যাহার বা শিথিলও করা হয়েছে। কিন্তু অনেক কর্তৃপক্ষই সেসব শর্ত পূরণে আন্তরিক হয়নি। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যায়নি অথবা স্থায়ী, অস্থায়ী দুই ক্যাম্পাসেই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাই ইউজিসির এমন সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই যৌক্তিক হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু ক্যাম্পাসের অনিয়মই নয়, এমন আরো অনেক খবর গণমাধ্যমে আসে, যা নিয়ে দেশের শিক্ষাবিদরা উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো শঙ্কিত। দেশে বর্তমানে শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যার মধ্যে মাত্র এক ডজন বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রমের ন্যূনতম মান রক্ষার চেষ্টা করা হয়। বাকিগুলোতে না আছে মানসম্মত শিক্ষক, না আছে ভালো ক্লাসরুম, না আছে ল্যাব, লাইব্রেরি বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে শুধু সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
দেশে উচ্চশিক্ষার বেহাল অবস্থা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। শুধু বেসরকারি নয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানও দ্রুত নিম্নগামী হচ্ছে। বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রায় অর্ধশত বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি পাকিস্তানেরও সাত-আটটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে হাজারের মধ্যে। তাহলে বাংলাদেশের এমন অধোগতি কেন? অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক এগিয়েছে। শিল্প ও সেবার পরিধি বাড়ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, সেসব ক্ষেত্রে কাজ করার মতো উচ্চশিক্ষিত তরুণের অভাব প্রকট। দিন দিনই বাড়ছে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা। এমনটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাবৃদ্ধি নয়, শিক্ষার মানও নিশ্চিত করতে হবে। ইউজিসিকে এ ক্ষেত্রে আরো উদ্যোগী হতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনে ইউজিসিকে আরো ক্ষমতায়িত করতে হবে এবং লোকবল বৃদ্ধি করাসহ অন্যান্যভাবে ইউজিসির সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমরা চাই দেশে উচ্চশিক্ষার ন্যূনতম মান অর্জিত হোক।