জৈন্তাপুরে রাত হলেই চলে পাহাড় কাটার ধুম

19

জৈন্তাপুর থেকে সংবাদদাতা :
জৈন্তাপুর উপজেলার চিকনাগুল ইউনিয়নের পশ্চিম চটি ও ফতেপুর ইউনিয়নের বাগেরখাল (সাইনবোর্ড) এলাকায় রাত হলেই চলে পাহাড় কাটার মহাধ্বংসযজ্ঞ। গত দুই সপ্তাহ থেকে ৭নং গ্যাস কূপের বিপদ জনক এলাকা সহ আরো বিভিন্ন এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে পাহাড়া কাটা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে চিকনাগুল ঠাকুরের মাঠি এলাকার মৃত হামিদ আলীর ছেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চিকনাগুল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মছদ্দর আলী, চিকনাগুল ঘাটেরচটি কবরস্থানের পাশে পাহাড় কাটছেন মৃত মদরিছ আলী মেম্বারের ছেলে শাহীন আহমদ, মৃত মছন মিয়ার ছেলে কামরুল, বাগেরখাল (সাইনবোর্ড) এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে হবিব আলী ও উমনপুর এলাকায় মোহাম্মদ আলী ড্রাইভারের টিলা যাহার মালিক হরিপুর এলাকার নুর মিয়া হাজীর ছেলে মোহাম্মদ আলী ড্রাইভার ও সহুদর সেলিম আহমদের বিরুদ্ধে। তবে পাহাড় কাটার বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বার বার অভিযান পরিচালনা করলেও পাহাড় কাটায় জড়িত সিন্ডিকেট সদস্যরা জরিমানা দিয়ে পার পেয়ে যায়। অথচ তাদের বিরুদ্ধে কোন মামলা হয় না। পাহাড় কাটা বন্ধ করতে না পারায় তিনি ব্যর্থতা প্রকাশ করেন।
স্থানিয়রা জানান, সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিঃ এর নতুন ১০নং গ্যাস কূপের সন্ধ্যান পাওয়ায় কৃষি জমি ভরাট করার জন্য পাহাড়ের ওপর নজর পড়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের। বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যেনতেনভাবে পাহাড়-টিলা কেটে বালু নিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের তোয়াক্কাও করছে না তারা। সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৭টি স্পটে বনাঞ্চলের ১০টি পাহাড়ে মহাধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে বালুখেকো সিন্ডিকেট। গত বর্ষা মৌসুমে ঐ চিকনাগুল এলাকায় পাহাড় ধসে একি পরিবারের ৫ জনের প্রাণ হানির ঘটনা ঘটে তার পরও তারা তেমে নেই। এতে পরিবেশ বিপর্যয় সহ আবারও পাহাড়ধসের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, পাহাড়ে এস্কেভেটর, ফেলুডার ও নদীতে এস্কেভেটর বসিয়ে হাজার হাজার ঘনফুট বালু আহরণ করে থাকে প্রতি দিবারাতে। এ কারণে পাহাড়গুলো ধ্বংসস্তূপ পরিণত হয়েছে। চিহ্নিত সিন্ডিকেটের দিয়ে যত্রতত্র ভাবে বালু ও মাটি সরবরাহ করছে। এদিকে বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে ১০টি পাহাড়ে ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনায় নাগরিক সমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন থাকার পরও কিভাবে পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকা-চালিয়ে যাচ্ছে, এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সারী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ও কলামিস্ট আব্দুল হাই আল হাদি এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্র দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আল্লাহ পাহাড় গুলোকে পেরেড় হিসেবে সৃষ্টি করেছেন অথচ তারা আজ সেগুলো ধ্বংস করে ফেলছে। কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাই।
পাহাড় কাটায় জড়িত মছদ্দর আলী মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করেন। অনুমতি নেওয়া হয়েছে কি না প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অনুমতি কে দেবে? আপনারা-আমরা মিলে সমঝোতার মাধ্যমে তো করে ফেলতে পারি। আগামীদিন আমার সাথে দেখা করেন। যেহেতু আমার আর কোন ব্যবসা নেই তাই পাহাড় কাটছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কঠোর নজরদারি সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জৈন্তাপুরে পাহাড় কেটেই চলছেন। কারও কোনো কথা শুনছেই না। রাতের আধারে পাহাড়-টিলা ধ্বংস করে সিন্ডিকেট। জরিমানা করেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। অভিযানে যাওয়ার পর কোন লোকজন পাওয়া যায়না তারা পালিয়ে যায়। তাই আমরা তাদেও বিরুদ্ধে মামলা নিতে পারি না।
পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মোঃ বদরুল হুদা পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জৈন্তাপুরে পাহাড় কাটায় জড়িতদের নোটিশ করা হয়েছে কিন্তু কোন মামলা করিনি। আমি একবার অভিযান করে জরিমানা করেছি। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০১০ অনুযায়ী, পাহাড় কাটা আমলযোগ্য অপরাধ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটতে বা নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। আমরা নতুন করে তাদের বিরুদ্বে আবার নোটিশ পাঠাবো।