নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনমান রক্ষা জরুরি

10

বিশ্বব্যাংক সতর্ক করেছে, বিশ্ব অর্থনীতি এখন ‘বিপজ্জনকভাবে মন্দার কাছাকাছি।’ স্বাভাবিকভাবেই তার আঁচ লাগবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। এরই মধ্যে তার অনেক লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক্রমাগতভাবে কমছে। এর ফলে বেড়ে যাচ্ছে আমদানি পণ্যের দাম। মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের পূর্বাভাস প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতি ক্রমেই গতি হারাচ্ছে। এ বছর বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ মন্দার কবলে পড়তে পারে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিও কমছে। এ বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১.৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমে যাবে। তাদের প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.২ শতাংশ, যা বিশ্বব্যাংকের আগের পূর্বাভাসগুলো থেকেও কমেছে। বিশ্বব্যাংক গত জুনে বলেছিল প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৭ শতাংশ এবং অক্টোবরে বলেছিল প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে ৬.১ শতাংশ।
বিশ্ব এখন এক চরম অস্থির সময় পার করছে। প্রায় তিন বছর ধরে চলা করোনা মহামারি অনেক বড় ধাক্কা দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। লকডাউন ও বিধি-নিষেধের কারণে পর্যটন, পরিবহনসহ অনেক শিল্পেই মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। উৎপাদনও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। একে কেন্দ্র করে পশ্চিমা বিশ্ব একের পর এক অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এতে বিশ্ববাণিজ্যের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গেছে। পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে। স্বাভাবিক পরিবহন ব্যাহত হওয়ায় বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। ফলে সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। সেই পরিস্থিতি সামলাতে উন্নত অর্থনীতিগুলো ক্রমাগতভাবে সুদের হার বাড়িয়ে চলেছে। আর তা বিশ্বের মুদ্রাবাজারে আরেক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। ডলারের বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার মূল্য কমে যাওয়ার কারণেও সেসব দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।
শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাও সাম্প্রতিক সময়ে একই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল অবস্থায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল অর্থনীতিগুলোকে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতি উপলব্ধি করে তা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে জরুরি বিবেচনায় রাখতে হবে দেশের নিম্নবিত্ত মানুষের স্বার্থকে। মূল্যস্ফীতি হলে তাদের প্রকৃত আয় কমে যায়। জীবনযাত্রার মান ক্রমেই নিম্নমুখী হয়। দারিদ্র্য নিরসন কর্মসূচিগুলোর উদ্দেশ্য অর্জন ব্যাহত হয়। তাই এমন কিছু করতে হবে, যাতে ক্রমেই বেশিসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে না চলে যায়।
বাংলাদেশে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর অতি মুনাফার লোভও দায়ী। আসছে পবিত্র রমজান মাস। মুসলিম বিশ্বে এ সময় জিনিসপত্রের দাম কমলেও বাংলাদেশে দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়তে থাকে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটবাজি ও অতি মুনাফাবাজি বন্ধ করতে হবে। আমদানি যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয় তার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থনৈতিক মন্দার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে হবে এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। একইভাবে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনমান রক্ষায় জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে।