দেশের আট জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আরো অনেক জেলায় তাপমাত্রা শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। একই সঙ্গে বিরাজ করছে ঘন কুয়াশা। সারা দিনে সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে এসব এলাকায় জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায়ও হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে যানবাহন চালাতে হয়। ঘটে দুর্ঘটনাও। ঘন কুয়াশার কারণে অনেক সময়ই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকছে। পণ্য পরিবহন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদিকে ঠা-াজনিত রোগের প্রকোপ এত বেড়ে গেছে যে দুর্গত এলাকাগুলোর হাসপাতালে রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না। আগুন পোহাতে গিয়ে অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। ,
শীতে শৈত্যপ্রবাহ আসবে, গ্রীষ্মে তাপপ্রবাহ হবেÑএগুলো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকতে হয়। দুর্ভাগ্যজনক যে দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। শীতে সর্দি, কাশি, হাঁপানি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগ অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হয়। অনেককে হাসপাতালে নেওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। অক্সিজেন সাপোর্টের প্রয়োজন হয়। জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে এসব সুবিধা খুবই কম। হাসপাতালের শয্যাসংখ্যাও কম। শ্বাসকষ্টের রোগীদেরও মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। অনেক সময়ই এতে রোগীদের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়ে। ,
শীতের প্রধান শিকার হয় গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র শ্রেণির মানুষ। থাকার ভালো ঘর নেই। ভাঙা বেড়া দিয়ে ঘরে শীতের কনকনে বাতাস প্রবেশ করে। গরম জামা-কাপড়েরও অভাব রয়েছে। ফলে সহজেই তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার দরিদ্র মানুষকে এর মধ্যেই কাজের সন্ধানে বের হতে হয়। মাঠেঘাটে বাতাসের মধ্যে কাজ করার সময়ও অসুস্থ হয়। তাই প্রতিবছর অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে শীতের কাপড় বিতরণের উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন এবং তা করা প্রয়োজন শীত জাঁকিয়ে বসার আগেই। অতীতে এ ক্ষেত্রে প্রচুর সামাজিক কর্মসূচি দেখা যেত, এখন সেসবের মধ্যেও যেন ভাটার টান লেগেছে। ,
আবহাওয়া বিভাগের মতে, বর্তমান শৈত্যপ্রবাহ দু-এক দিনের মধ্যে কমে যেতে পারে। কিন্তু এ মাসেই আরো একাধিক শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এমন অবস্থা হতে পারে আগামী মাসেও। তাই এ মৌসুমেও দরিদ্র শ্রেণির মধ্যে পর্যাপ্ত গরম জামা-কাপড় বিতরণের ব্যবস্থা করা জরুরি। পাশাপাশি হাসপাতালগুলোর শয্যাসংখ্যা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। প্রয়োজনে বিশেষ চিকিৎসা ক্যাম্পের আয়োজন করতে হবে। পাশাপাশি কিছু স্থায়ী উদ্যোগ নিতে হবে। উন্নত ঘরদোর তৈরিতে দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করতে হবে। ভাসমান মানুষের জন্যও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।