উন্নয়নের ছোঁয়া শুধু নয়, প্রকৃত অর্থেই এখন বাংলাদেশে উন্নয়নের গতি সঞ্চারিত হয়েছে। স্বপ্ন থেকে পদ্মা সেতু এখন বাস্তব হয়েছে। গতকাল আরো একটি স্বপ্ন পূরণ হলো। যানজটের নগরীতে যাত্রীদের নতুন অভিজ্ঞতা আর স্বস্তির যাত্রার স্বপ্ন দেখিয়ে মেট্রো রেলের যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ।
দেশের প্রথম মেট্রো রেলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার প্রথম এই বৈদ্যুতিক গণপরিবহনের গার্ডের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়ে তিনি সবুজ পতাকা দুলিয়ে মেট্রো রেলের যাত্রার সংকেত দিলেন। প্রথম দিন প্রথম যাত্রীও হলেন সরকারপ্রধান। মেট্রো রেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় আরেকটি পালক দিতে পারলাম ঢাকাবাসীকে, আরেকটি পালক সংযোজিত করতে পারলাম।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব কিছু পরিকল্পনামাফিক চললে মেট্রো রেলের মাধ্যমে গণপরিবহনের নতুন রূপের সঙ্গে পরিচিত হবে নগরবাসী। তাঁদের মতে, ঢাকার বর্তমান অবস্থায় মেট্রো রেল লাইফলাইনের কাজ করবে। এমআরটির আরামদায়ক ও নির্ভরতা যাত্রীর ভ্রমণকে উপভোগ্য করে তুলবে।
এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করা হয় ২৬ জুন ২০১৬। ১০ এপ্রিল ২০১৮ প্রথম স্প্যান বসে। প্রথম পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করে গত বছর ৭ আগষ্ট। ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১.১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রো রেল নির্মাণের কাজ চলছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়। ঢাকার মেট্রো রেলের প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শোকের ঘটনাও। নির্মাণকাজ উদ্বোধনের কিছুদিন পর ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় সাত জাপানি নাগরিক নিহত হন। ওই সাত জাপানি নাগরিকের মধ্যে ছয়জন ছিলেন দুটি মেট্রো রেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত। উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রো রেল ডিপোতে নিহতদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেছে সরকার।
শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশন চলাচলের জন্য খুলে দিচ্ছে সরকার। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এই ট্রেন ধরেই উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে ৪০ মিনিট সময়ে। মেট্রো রেলের নির্মাণকাজ তদারকি ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড বলছে, পূর্ণ মাত্রায় চালু হলে এমআরটি-৬ প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। ডিএমটিসিএলের আশা, মেট্রো রেলের কারণে শহরে ছোট ছোট যানবাহনের প্রয়োজন অনেক কমে যাবে। সেই সঙ্গে কমবে যানবাহনে জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার। ঢাকা মহানগরীর যাতায়াত ব্যবস্থায় যোগ হবে ভিন্ন মাত্রা ও গতি। নগরবাসীর কর্মঘণ্টা সাশ্রয় হবে।
কোনো উন্নয়নই এক প্রান্তিক নয়। অবকাঠামো উন্নয়ন অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ে। মানুষের কর্মসংস্থান হয়, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। আর তার জন্য একটি শুভ সূচনার প্রয়োজন। মেট্রো রেল হাজার হাজার কর্মঘণ্টা সাশ্রয় করবে। মেট্রো রেলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও নতুন আবাসন গড়ে উঠছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে।