কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের সকল নাগরিকের তথ্য একটি উৎসে রাখার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত রেজিস্ট্রার (ডাটাবেজ) তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। ভারতীয় নাগরিকের সব তথ্যের ডাটাবেজ হলো আধার কার্ড (ভারতীয় নাগরিকদের জন্য একটি বিশেষ নম্বর যুক্ত পরিচয় পত্র)। ভারতের আধার কার্ডের চেয়েও শক্তিশালী নাগরিক ডাটাবেজ, ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার‘ বা এনপিআর তৈরি করতে যাচ্ছে বিবিএস। করোনা মহামারীর মধ্যে তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে সকল নাগরিকের তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজ আপডেট করেছে বলে জানালেন এসআইডি সচিবসহ বিবিএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আগারগাওস্থ পরিসংখ্যান ভবনের অডিটোরিয়ামে গতকাল বিবিএস এবং ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মশালায় বক্তব্যে তারা এসব তথ্য জানান। বিবিএস মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রদান অতিথি ছিলেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য অধিদফতরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা (পিআইও) সুরথ কুমার সরকার, বাংলাদেশ বেতারের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (নিউজ) এএসএম জাহীদ।
সংশ্লিস্টরা জানান, ডাটাবেজটির নাম দেয়া হয়েছে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার (এনপিআর)। বর্তমানে পলিসি লেবেলে এনপিআরের কাজ চলছে। এনপিআরে একজন নাগরিকের ৩৩ ধরনের তথ্য থাকবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, ব্যক্তির নাম, এনআইডি-পাসপোর্ট-জন্ম নিবন্ধন-মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি, জরুরি নম্বর, পিতা-মাতার নাম, স্ত্রী বা স্বামীর নাম, বসতবাড়ি, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, জন্মস্থান, জাতীয়তা, ধর্ম, ব্লাড গ্রুপ, রেসিডেন্স স্ট্যাটাস, বর্তমান ঠিকানা, ঘরের ধরন, পানির উৎস বা স্যানিটেশন বা আলোর উৎস, স্থায়ী ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, নাগরিকত্ব, কান্ট্রি মাইগ্রেশন, করোনিক ডিজিস, জেনেটিক ডিজিস প্রভৃতি। এই তথ্য ভোটারের জন্য নির্বাচন কমিশনও ব্যবহার করতে পারবে। মানুষের মৃত্যু হলেও হাজার বছর তার তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। এমনকি মারা গেলেও তাদের তথ্য মুছে ফেলা হবে না। মারা গেলে মৃত্যুর তথ্য হালনাগাদ করে তা সংরক্ষণ করা হবে। সবাই এই তথ্য দেখতে পারবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউ সেই তথ্য মুছে ফেলতে বা কাটা-ছেঁড়া করতে পারবে না। এখান থেকে তথ্য নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসপোর্টসহ অন্য যত সংস্থা আছে, তারা তাদের তথ্য হালনাগাদ করবে।
সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, ‘ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার’ বা এনপিআর প্রকল্পের মাধ্যমে ডাটাবেজ তৈরী করে দেশের সকল নাগরিকের আলাদা আলাদা তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। তিনি বলেন, কোভিডের জন্য আমাদের দেশের চলমান জনশুমারি ও গৃহগণনা কার্যক্রম পেছানো হয়েছে। কারণ আমাদের সশরীরে মাঠে গিয়ে ডাটা সংগ্রহ করতে হয়। কিন্তু উন্নত বিশ্বে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে না। তারা আরও আপডেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে। তিনি বলেন, বিশেষ করে আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র জাপানের পরিসংখ্যান খুব শক্তিশালী। করোনা মহামারীর মধ্যে তারা জনশুমারির তথ্য আপডেট করেছে। তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে জাপানের সকল নাগরিকের তথ্য সম্বলিত ডাটাবেজ আপডেট করেছে। তিনি বলেন, অনেক সময় কার পরিবারের কে, কার সন্তানকে, কার সাথে কার বিয়ে হয়েছিল এগুলো নির্ধারণ করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এটা হলে এ বিষয়ে অনেক জটিলতা কমে যাবে।
সচিব বলেন, করোনার মধ্যে আমরা অনুভব করেছি যে, আমাদের সকল নাগরিকের ব্যত্তিগত ডাটাবেজ দরকার। ডাটাবেজ থাকলে সহজেই নাগরিকের যেকোনো তথ্য আপডেট করতে পারব। আপডেট তথ্যের জন্য বিবিএস থেকে প্রত্যেক নাগরিকদের ব্যক্তি ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। সেখানে প্রত্যেক নাগরিকের নাম, ঠিকানা, বৈবাহিক অবস্থা, সম্পত্তি, পরিবারের সদস্যসহ আরও আনুষাঙ্গিক তথ্য থাকবে ডাটাবেজে। এখান থেকে কারও তথ্য মুছে যাবে না। এই পদ্ধতি জাপানসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো করছে বলে জানান তিনি।
বিবিএসের সেন্সাং উইংয়ের পরিচালক ড. মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ভারতের আধার কার্ডের থেকেও শক্তিশালী হবে এনপিআর। মানুষ মারা যাবে কিন্তু ডাটা সংগ্রহ থাকবে হাজার বছর। একটি শিশু জন্মের পরেই এনপিআর ডাটাবেজে চলে আসবে। নাগরিকের যখন তথ্য দরকার হবে তখন এক ক্লিকেই সব তথ্য বের হয়ে যাবে। প্রকল্প অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করছে সংস্থাটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দেয়ার পরেই বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে বিবিএস।