স্বাস্থ্যকর পরিবেশে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য কোনো একটি দেশের মোট আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ বনভ‚মি থাকা জরুরি। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রকৃত বনভ‚মির পরিমাণ ৫ শতাংশেরও কম। তার পরও নানাভাবে কমছে বনভ‚মির পরিমাণ। সারা দেশে দুই লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বনভ‚মি অবৈধ দখলে রয়েছে।
পাশাপাশি কমছে বনের ঘনত্ব, নষ্ট হচ্ছে বৈশিষ্ট্য। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ বনশূন্য হয়ে যাবে। এই অবস্থায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কর্মপরিকল্পনা (প্ল্যান অব অ্যাকশন) প্রণয়ন করে ধারাবাহিক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার জন্য। যদিও এই নির্দেশনা কতটুকু পালিত হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে।
তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, পঞ্চাশের দশকেও মধুপুর বনাঞ্চলে বাঘের অবাধ বিচরণ ছিল। ছিল বুনো মোষ, গয়ালসহ আরো অনেক বন্য প্রাণী। আর এখন সেখানে শিয়াল, শজারুর মতো প্রাণীরও থাকার মতো পরিবেশ নেই। শুধু মধুপুর নয়, সারা দেশেই কমছে বনভ‚মি। এই কমার পেছনে বহু ধরনের অপপ্রয়াস রয়েছে। সিএস রেকর্ড অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে থাকা বনভ‚মি পরবর্তী সময়ে এসএ/আরএস/বিএস জরিপে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ড করা হয়েছে। বনের ওপর দিয়ে রাস্তা গেছে, সেই রাস্তার দুপাশে প্রভাবশালীরা বনের জমি দখল করে স্থাপনা, এমনকি শিল্প-কারখানা তৈরি করেছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দখলকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার ৫৬৬। অবৈধ দখলকারীদের তালিকায় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে হাটবাজার, ছোটখাটো দোকানপাটও রয়েছে। বনের জায়গায় চাষাবাদের জমিও বানানো হয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সরকারের সময় রাজনৈতিক আনুক‚ল্য বা পক্ষপাতমূলকভাবে বহু মানুষকে বনের জমি লিজও দেওয়া হয়েছে। ফলে মধুপুর, ভাওয়ালের মতো অনেক বন আজ অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
শুধু বনের জমি দখল নয়, বনের পাশে অবৈধভাবে করাতকল বসিয়ে অবাধে বনের গাছ কেটে চেরাই করা হচ্ছে। শত শত ইটভাটা স্থাপন করে বনের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। এমনকি বনের পাশে চুল্লি বানিয়ে কাঠ পুড়িয়ে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা বানানো হচ্ছে। অভিযোগ আছে, অর্থের বিনিময়ে বনকর্মীরা বন ধ্বংসের প্রক্রিয়া বন্ধ করার বদলে উৎসাহিত করছেন। বিশেষ করে সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলো ধ্বংসের জন্য বনকর্মীদের উদাসীনতাকেই বেশি দায়ী করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সংসদীয় কমিটি যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে এসব নির্দেশনা যাতে যথাযথভাবে পালিত হয়, সে জন্য নজরদারিও রাখতে হবে। তা না হলে অজুহাতের পর অজুহাত উঠবে, কাজের কাজ কিছুই হবে না।
দশকের পর দশক ধরে চলছে বনের জমি দখল ও ধ্বংসের প্রক্রিয়া। দেশে বন ও পরিবেশ রক্ষার দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি বলেই আজ দেশে বন ও বনভ‚মির এই অবস্থা। তাঁদের সব কর্মকাÐ জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি সংসদীয় কমিটির নির্দেশিত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আশা করি দেশের বন ও পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ সর্বোচ্চ আন্তরিকতার পরিচয় দেবে।