বাংলাদেশের অগ্রগতির বাধা জনসংখ্যাস্ফীতি

19

স্টাফ রিপোর্টার :
স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে যেসব সমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার প্রত্যেকটির সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জনসংখ্যাস্ফীতি দায়ী।
একটি দেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী মোট মানুষের সংখ্যাকে জনসংখ্যা বলে। আর এ জনসংখ্যা যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ও জীবনযাত্রার স্বাভাবিক গতিকে ব্যাহত করে, তখন তাকে জনসংখ্যা স্ফীতি বলে অভিহিত করা হয়। দক্ষ জনসংখ্যা একটি রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য যেমন আশীর্বাদস্বরূপ তেমনি অধিক জনসংখ্যা একটি রাষ্ট্রের জন্য অভিশাপস্বরূপ।
পৃথিবীর মোট আয়তনকে, বাংলাদেশের আয়তন দিয়ে ভাগ করলে দেখা যায়, ভূমির পরিমাণের দিক দিয়ে বাংলাদেশের ভূখ- হচ্ছে পৃথিবীর মোট আয়তনের প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভাগের এক ভাগ, যা আয়তনের দিক দিয়ে পৃথিবীর ৯৪তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে আরো ৯৩টি বড় দেশ রয়েছে। অথচ জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১১২৫ জন।
বাংলাদেশে সর্বশেষ আদমশুমারি ২০১১ সালের ১৫ থেকে ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে ২০২২ সালে ১৫-২১ জুন প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ কার্যক্রম প্রকল্প শুরু হয়েছে। ২০১১ সালের শুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যা ১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৪ জন। ২০২২ সালের জনশুমারি-২০২২ এর তথ্য মতে দেশের মোট জনসংখ্যা দাড়িয়েছে ১৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। যার মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লক্ষ ৪৭ হাজার ২০৬ জন, পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লক্ষ ১২ হাজার ৮২৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গ ১২ হাজার ৬২৯ জন।
এভাবের জনশুমারিতে নারীর সংখ্যা বেড়েছে এক কোটি ১৪ লাখ ১৩ হাজার ৩০৫ জন। গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৭ জন। গত ১০ বছরে গ্রামে জনসংখ্যা বেড়েছে দুই কোটি ৫৮ লাখ তিন হাজার ৭৩ জন। শহরাঞ্চলে বসবাস করেন এমন জনসংখ্যা পাঁচ কোটি ২০ লাখ ৯ হাজার ৭২ জন। গত ১০ বছরে শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে এক কোটি ৮৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৯ জন।
অর্থনীতিবিদ ম্যালথাসের জনসংখ্যা তত্ত্ব অনুযায়ী দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পায় গাণিতক হারে, কিন্তু জনসংখ্যাবৃদ্ধি পায় জ্যামিতিক হারে।
ম্যালথাস-এর তত্ত্ব যদি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে, এটি এদেশে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হচ্ছে। আজ বাংলাদেশের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই এর করুণ অবস্থা। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি হাজারে ১৮.৮ জন শিশু ভূমিষ্ঠ হয়। মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৫.১ জন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হচ্ছে ১.২২%। জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বর্তমানে বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। আগামী ২০ বছর পরে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০ কোটিতে। আমরা যা দেখতে পাই, তা এক রক্ত হিম করা সর্বনাশা দৃশ্য। জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়েনি জমি এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ফসলের উৎপাদন। ফলে জনগণের একটি বিরাট অংশ সীমাহীন দারিদ্রের দিকে দিনদিন ধাবিত হচ্ছে। বস্ত্রহীন কঙ্কালসার এই মানুষগুলোর জন্যে উপযুক্ত গৃহসংস্থান, চিকিৎসা স্বাস্থ্য পরিচর্যা ব্যবস্থা, শিক্ষার ব্যবস্থা কিছুই নেই। জনগণের এ হতভাগ্য বিরাট অংশকে দেখা যায় রেলস্টেশন, বস্তি, লঞ্চ ও স্টিমার ঘাট, উন্মুক্ত প্রান্তর এবং শহরের ডাস্টবিনের পাশে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ এমন আকার ধারণ করেছে যে, এ থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব। তবে সচেতনতা ও গুরুত্বের সাথে বিষয়টি বিবেচনা করে কতিপয় পদক্ষেপ নিলে জনসংখ্যাবৃদ্ধির হারকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব। সরকারের একার পক্ষে কখনোই এতো বড় সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। প্রয়োজন সম্মলিত প্রচেষ্টার।
জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতা। আমাদেরকে ভাবতে হবে যে, কেবল আমরা নই আমাদের বংশধরেরাও যেন খেয়ে ও পরে ভালো থাকতে পারে।। রাষ্ট্রের দায়িত্ব সরকারের একার নয় বরং আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনসংখ্যা রোধে এগিয়ে আসতে হবে। নিজ হৃদয় দিয়ে এ সমস্যাকে উপলব্ধি করতে হবে। মনে রাখতে হবে আগে নিজে বদলাতে হবে তাহলে বদলাবে দেশের অবস্থা।