সিলেটে বিনা দোষে ৬ মাস ধরে কারাগারে কলেজছাত্র

15

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেটে হত্যা মামলায় ইমন আহমদ নামের এক কলেজছাত্র বিনা দোষে ছয় মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন বলে স্বজনেরা দাবি করছেন। এ ছাড়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া এক আসামিও বলেছেন, ঘটনার সময় তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ‘কালা ইমন’ নামের আরেক তরুণ। এদিকে মামলার বাদী বলেছেন, তিনি এখন একটু বেকায়দায় আছেন। তা না হলে আদালতে গিয়ে বলতেন, কলেজছাত্র ইমন আসামি নন।
সোমবার ইমন নগররী কুয়ারপাড়ের প্রয়াত ময়না মিয়ার পুত্র তিনি সিলেট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের উড ওয়ার্কিং বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ছাত্র।
পুলিশ, এজাহার ও স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে সিলেট নগরীর এম এ জি ওসমানী মেডিকেলের ৩ নম্বর ফটকের সামনে হোটেলশ্রমিক নাজিম উদ্দিনকে (২০) কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় আহত হন শাহ আলম ও রুম্মান। তাঁরা নগরের জালালাবাদ এলাকার বাসিন্দা ও নিহত নাজিমের আত্মীয়। ঘটনার রাতেই সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহত নাজিমের বাবা নুর মিয়া। আসামিরা হলেন নগরের মুন্সিপাড়ার সবুজ মাঠ এলাকার জুয়েল আহমদ, মুন্সিপাড়ার রুমেল আহমদ, সুবিদবাজার বনকলাপাড়ার সোহাগ, মোজাম্মেল, মুন্সিপাড়ার ইমন ও জনি এবং কুয়ারপাড়ের ইমন, একই এলাকার সামি, বাগবাড়ি এলাকার কবির ও সুবিদবাজার বনকলাপাড়ার রফিকুল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাজিম খুন হওয়ার সময় ঘটনাস্থল থেকে জনতা জুয়েল আহমদকে আটক করে পুলিশে দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের নাম বলেন জুয়েল। এর মধ্যে নগরীর মুন্সিপাড়ার মামুন মিয়ার পুত্র ‘কালা ইমন’ ছিলেন।
নিহত নাজিমের এক আত্মীয় জানান, নাজিমের বাবা নুর মিয়া থানায় মামলা করতে যাওয়ার সময় তিনিও সঙ্গে ছিলেন। কুয়ারপাড়ের ইমনকে তিনি আগে থেকেই চিনতেন। ঘটনায় এই ছাত্র জড়িত নন দাবি করলে থানা-হেফাজতে থাকা জুয়েলকে ডাকা হয়। কুয়ারপাড়ের ইমনের ছবি দেখানো হলে জুয়েল জানান, ছবির এই তরুণকে তিনি চেনেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নাজিমের ওই আত্মীয় আরও বলেন, জুয়েল ১৩ এপ্রিল সিলেটের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমেনের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এতে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ‘কালা ইমন’। এদিকে এর আগে ১১ এপ্রিল র‌্যাব-৯-এর একটি টিম সোহাগ ও সানিকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানায় হস্তান্তর করে। সোহাগ ও সানি আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে শুধু ইমন বলেছেন। ১৪ এপ্রিল কলেজছাত্র ইমনকে গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব। পরে তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
জানতে চাইলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া জুয়েলের মা পারভীন বেগম বলেন, কারাগারে থাকা ইমনকে জুয়েল চেনেন না বলে তাঁকেও জানিয়েছেন।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইন অনুযায়ী আমাদের কিছুই করার নেই। তবু জজ স্যার বা ঊর্ধ্বতন কেউ কারা পরিদর্শনে এলে ইমনের বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করব।