বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ আজ ॥ একদিন আগেই কানায় কানায় পূর্ণ আলিয়ার মাদ্রাসার মাঠ, উৎসবের আমেজ ॥ নৌকায় ও ট্রেনে চড়ে সমাবেশে আসছেন নেতাকর্মীরা

5
সিলেটের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ফলে শনিবারের বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নদী পথে নৌকা করে সিলেটে আসেন নেতাকর্মীরা। ছবি- কানিশাইল সুরমা নদী থেকে তোলা। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদ বিলুপ্ত ও সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ শনিবার আলিয়া মাদ্রাসার মাঠে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে সিলেট বিএনপি। এর একদিন আগে (শুক্রবার) সমাবেশস্থলসহ মাঠের আশপাশ এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। সরকার বিরোধী শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হচ্ছে সমাবেশস্থল ও আশপাশের এলাকা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার মাঠ ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
এদিকে সিলেটে ধর্মঘট ঘোষণার আগের দিন বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা। ফলে আজকের সিলেটে অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির এই বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিতে সিলেটের প্রত্যন্তঞ্চল থেকে নৌকায় ও ট্রেনে করে হাজার হাজার নেতাকর্মী আসছেন।
এসময় দেখা যায়- বিভিন্ন স্থান থেকে আসা নেতাকর্মীরা ভোগান্তি করে সমাবেশে এলেও তাদের চোখেমুখে আনন্দ উল্লাস লক্ষ্য করা গেছে। তারা হাসিমুখে ‘বিএনপি, বিএনপি, খালেদা, খালেদা, জিয়া, জিয়া’ শ্লোগান দিতে দেখা গেছে। তাদের শ্লোগানে আশপাশের

বিএনপির গণসমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের জন্য খাবার রান্না করা হচ্ছে। ছবি- মামুন হোসেন

এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠছে।
এদিকে- বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতির সুযোগে ‘মোবাইল চুরির হিড়িক পড়েছে’। শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৬ টা পর্যন্ত ২০ টি মোবাইল খোয়া গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে মোবাইল ও মানিব্যাগ চুরির কোনো তথ্য নেই বলে শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশের ডিসি আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন। তিনি জানান- ‘মোবাইল বা মানিব্যাগ চুরির তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ এরআগে শুক্রবার বিকেল থেকে বিপুল সংখ্যক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থান থেকে সমাবেশস্থলে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আসছেন। তাদের কণ্ঠে সরকার বিরোধী নানা শ্লোগান দিতে দেখা দিয়েছে। সময় যতো যাচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদ বিলুপ্ত ও সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন বিভাগে বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ করছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিভাগ ও ফরিদপুর জেলায় গণসমাবেশ করেছে দলটি। তারই ন্যায় সিলেটেও আজ ১৯ নভেম্বর গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি। এদিন সিলেট সরকারি আলিয়া মাঠে অনুষ্ঠিতব্য গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- মাঠের এক পাশে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ তৈরি। মাঠে চলছে মাইক টানানো এবং মাঠের দুই পাশে দুটি ‘বড় পর্দা’ লাগানো হয়েছে। মাঠে হাজারও বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছেন। বেশকিছু নেতাকর্মী একেকজন একেক দায়িত্ব পালন করছেন। প্রত্যেকেই আছেন ফুরফুরে মেজাজে। যেন সভাস্থলে এক উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মঞ্চের তিন পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বিভাগের বিভিন্ন এলাকা নেতাদের উদ্যোগে ক্যাম্প। ক্যাম্পে ক্যাম্পে চলছে রান্না ও খাবারে আয়োজন। ক্যাম্পগুলোতে মওজুদ করে রাখা হয়েছে চালের বস্তা, তেল ও রান্নার সামগ্রী। কয়েকজন নারীকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মরিচ কাটতে দেখা যায়। প্রতিটি ক্যাম্পেই বড় বড়

বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে দুদিন পূর্বেই সমাবেশস্থলে চলে আসে হবিগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। মাঠে ক্যাম্প করে এখানেই রান্না ও খাবার আয়োজন করেন নেতাকর্মীরা। ছবি- মামুন হোসেন

ডেকচিতে হচ্ছে রান্নাবান্না। এছাড়াও মাঠের প্রবেশমুখে ‘ডা. জোবায়দা রহমান ফ্রি ফুড ক্যাম্প’। এ ক্যাম্প থেকে সমাবেশস্থলে আসা নেতাকর্মীদের পানি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
নগরীর চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, রিকাবীবাজার, লামবাজারসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপরই একেকটি মিছিল যাচ্ছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ধানের শীষ প্রতীক আর খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি। সবার মুখেই বিএনপির পক্ষে ও সরকারের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান। বাইকে, খোলা ট্রাকে, ভ্যানেও মিছিল করছেন অনেকে। মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উদ্দীপনা।
নৌকায় চড়ে বিএনপির সমাবেশে আসছেন কর্মীরা
সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের আগে পুরো বিভাগে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। বাধ্য হয়েই তাই নদীপথে নৌকায় করে সমাবেশে যোগ দিতে সিলেট আসছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। আজ শনিবার সকাল থেকে সিলেট নগরীর ঐতিহাসিক সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে হতে যাওয়া এই সমাবেশের আগের দিন শুক্রবার সকাল থেকে বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী এভাবে সিলেট এসে পৌঁছাচ্ছেন। মূলত সিলেট জেলার আশেপাশের ভাটী ওঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকেও সুরমা নদী হয়ে শত শত নেতা-কর্মী সিলেট নগরীর বিভিন্ন নৌঘাটে নোঙর করান তাদের নৌকা।
জানা যায়, দিরাই, শাল্লা, ছাতক, মধ্যনগর, ধরমপাশা, তাহিরপুর, নেত্রকোনা থেকে এসেছে শত শত নৌযান সিলেট এসেছে।
নৌযানে করে সিলেট আসা নেতা-কর্মীদের কয়েকজন জানান, শুক্রবার সকাল থেকে তারা মূলত বাসে করে সমাবেশে আসার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল সকালে হঠাৎ গণপরিবহন বন্ধের খবর জানতে পেরে রাতেই নৌকায় আসার প্রস্তুতি নেন। পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে রাখায় তারা নদী পাড়ি দিয়ে সমাবেশে উপস্থিত হতে পারছেন বলে উচ্ছস্বিত নেতা-কর্মীরা।
বিএনপির সমাবেশে মোবাইল চুরির হিড়িক!

সিলেট বিভাগীয় মহাসমাবেশ সফল ও জনসমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে বিকেলে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে বিশাল মিছিল বের করা হয়।

সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ উপলক্ষে নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। এ সুযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের মোবাইল ও মানিব্যাগ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত সমাবেশে প্রায় দুই ডজন মোবাইল খোয়া গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেট মহানগর পুলিশের ডিসি আজবাহার আলী শেখ বলেন- ‘এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। কেউ অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ এরআগে বিএনপির যতো গণসমাবেশ হয়েছে প্রায় প্রত্যেকটিতে মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও চোরকেও ধরে ফেলেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা।