সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
হাওরাঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কারণে পেছানো হয়েছে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষা। বন্যার সময়ে পানিতে দুই সপ্তাহের অধিক সময় ডুবেছিল সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জেলার বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর বইপত্রসহ শিক্ষার সরঞ্জাম পানিতে নষ্ট হওয়ায় অনিশ্চয়তায় স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরা। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মহামারি করোনার পর সর্বগ্রাসী বন্যা থাবা বসিয়েছে সুনামগঞ্জের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। বন্যায় আসবাবপত্র, ফার্নিচার,পাঠ্যবই, গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রসহ বন্যার পানিতে জেলার শিক্ষাখাতে ক্ষতি দুই কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
সোহাগ মিয়া, আমিন উদ্দিনসহ অনেক শিক্ষার্থীই জানায়, স্কুল বন্ধ থাকায় পাঠ্যদান চরম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। স্কুল খোলা থাকলে আমাদের লেখাপড়ারও চাপ থাকে। বন্যায় বই খাতা পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে, স্কুলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিষয় দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
এদিকে রফিকুল ইসলাম, রুবেল আহমদসহ অভিভাবক মহল বলছেন, করোনার পর বন্যায় শিক্ষা খাতের যে ক্ষতি হয়েছে, তা সামাল দেওয়া কঠিন। যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার করে পাঠদান সচল করার পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিশেষ নজর দিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
বালিজুরী ইউনিয়নের নয়াহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনামুল হক জানান, তার বিদ্যালয়ের ভেতরে পানি প্রবেশ করায় আসবাবপত্র,বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বন্যার পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।
জেলার হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, আমার ইউনিয়নে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়িতে পানিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত মেরামত ও শিক্ষার্থীদের পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়া শিক্ষাসামগ্রী দেয়া প্রয়োজন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএস আব্দুর রহমান জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। বন্যায় জেলার ১৪৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানিতে আক্রান্ত। এবারের বন্যায় শিক্ষাখাতের প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের আসবাপত্র, ফার্নিচার ও নথিপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির তালিকা করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন, বন্যায় সুনামগঞ্জের ২৩৩টি মাধ্যমিক স্কুল, ৯২টি মাদরাসা ও ৩৩টি কলেজ আক্রান্ত হয়েছে। অবকাঠামো, ফার্নিচার আসবাবপত্রের শেখ রাসেল ল্যাবের ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ও সরঞ্জামের ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, বন্যার পানিতে অনেক শিক্ষার্থীর বই নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মন্ত্রণালয়ে ৫০ হাজার নতুন বইয়ের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বন্যার কারণে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষা পেছানো হয়েছে। পরীক্ষা কবে নেওয়া হবে এমন নির্দেশনা এখনও আমাদের কাছে আসেনি। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তায় রয়েছে।