কাজিরবাজার ডেস্ক :
মাদকের বিরুদ্ধে ‘সাড়াঁশি’ অভিযানে দুই দিনে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১০ জন নিহতের পর র্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদ মাদক বিক্রেতাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। বলেছেন, সবাইকে এই ‘ব্যবসা’ ছাড়তে হবে। মাদকের শেকড়-বাকর তুলে ফেলার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
রবিবার দুপুরে র্যাবের পক্ষ থেকে রাজধানীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক দেশব্যাপী সচেতনতা কার্যক্রম উদ্বোধন হয়। এ সময় বাহিনীটির প্রধান এ কথা বলেন।
গত ৪ মে থেকে এই বিশেষ অভিযান শুরু করে র্যাব। এরপর থেকে গত ১৬ দিনে বাহিনীটির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে অন্তত নয় জন। এদের সবাই মাদক বিক্রিতে জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে বাহিনীটি।
গত রাতে গোয়েন্দা পুলিশও এই সাঁড়াশি অভিযানে যোগ দেয় আর এক রাতেই চার জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ গোয়েন্দাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন আরও চারজন।
অভিযানের ষোড়শ দিনে এই জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিতে বিভিন্ন বাসে মাদকবিরোধী স্টিকার সাটানো হয়। সারাদেশে ১০ লাখ পোস্টার-লিফলেট বিতরণ করার ঘোষণাও আসে এ সময়।
এ সময় র্যাব প্রধান ছাড়াও ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। দুইজনই মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণের সহযোগিতা চান।
চলতি বছরের শুরুতে পুলিশ সপ্তাহ চলাকালে ৯ জানুয়ারি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে এবং গত ৩ মে র্যাব সদরদপ্তরে র্যাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও বড় অভিযানের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর পরদিন থেকেই অভিযানে নামে র্যাব।
মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট উল্লেখ করে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘মাদকের খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে ডিলার সে যেই হোক, তাকে এ পেশা ছাড়তে হবে।’
‘হু এভার, হোয়াট এভার, হয়ার এভার, কেউ আমাদের অপারেশনের বাইরে নয়। মাদকের শিকড়-বাকড়সহ তুলে নিয়ে আসব।’
বেনজীর বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ, এর জন্য সমগ্র জাতিকে একত্র হতে হবে, সমগ্র শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
‘মাদকের বিরুদ্ধে জাতিগত যুদ্ধ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন ঐক্যবদ্ধ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছি। এবারও আশা করি এর একটা ভালো ফলাফল পাব, মানুষ বিজয়ী হব।’
মাদকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বেনজীর বলেন, ‘ওইসব হাত থেকে আইনের হাত অনেক বড়। দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হলে যে কোন অপশক্তি পরাজিত করার ক্ষমতা আমাদের আছে।’
অন্য এক প্রশ্নে র্যাব ডিজি বলেন, ‘২০ বছরের সমস্যা ২০ দিনে সমাধানের প্রত্যাশা করবেন না। কোন নির্দিষ্ট গ্রুপ আমাদের টার্গেট নয়। মাদকসেবী থেকে মাদক ব্যবসায়ী, বিশেষ করে মাদক ব্যবসায়ীরাই আমাদের টার্গেট।’
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের যুব সমাজ ও ভবিষৎ মেধাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মাদককে দমন করতে হবে।’
‘বাসা, বাড়ি, বাজারে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনামূলক স্টিকার বিতরণ করব, সচেতনা বৃদ্ধির জন্য যা যা করার করব। পাশিপাশি আমাদের যে অভিযানগুলো চলছে সেগুলো চলবে।’
‘ইতিমধ্যে পুলিশ প্রশাসন ও র্যাব মাদক নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে; মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান সব সময় চলবে, মাদককে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে নিয়ে আসব।’
‘মাদকের ব্যবসা যারা করেন বা মাদকে যারা সহযোগিতা করেন সবার বিরুদ্ধে আমরা এক সঙ্গে কাজ করব। আমরা সবাইকে সম্পৃক্ত করতে চাই কেন না মাদক একটা বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমাদের কাছে এসেছে।’
এ সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী ছাড়াও পুলিশ ও র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।