কাজিরবাজার ডেস্ক :
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজ ৯২ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আর মাত্র ৮ শতাংশ কাজ শেষ করার জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন এ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী, কনসালট্যান্ট ও কর্মকর্তা-শ্রমিকরা। সর্বশেষ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত কনসালট্যান্টদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রকল্প পরিচালক মোঃ হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ক্রস প্যাসেজ এবং টানেল সংশ্লিষ্ট টোল প্লাজার নির্মাণ কাজও সমাপ্তির পথে। আগামী ডিসেম্বরকে টার্গেট রেখে কাজ এগিয়ে চলেছে।
এদিকে, সেতু কর্তৃপক্ষের অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাসে (নভেম্বর) দুই টিউবের মধ্যে একটিতে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। তবে ডিসেম্বরে উদ্বোধন করা হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নদীর তলদেশ দিয়ে চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন প্রথম এ টানেলের নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল। শুরুতে এটিকে কর্ণফুলী টানেল নামে আখ্যায়িত করা হতো। পরবর্তীতে পরিবর্তন করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে। প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, এ টানেলে যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক ও পুরকৌশল কাজও শেষ পর্যায়ে।
টানেল অভ্যন্তরে অক্সিজেন ব্যবস্থা, লাইটিং ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজও চলছে সমানতালে। প্রকল্প পরিচালক মোঃ হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ কাজ একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। প্রতিদিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের এ কাজ এগিয়ে নিতে হচ্ছে। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি জানান, চলতি মাসে ৯২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বাকি ৮ শতাংশ কাজের মধ্যে যা রয়েছে তা নিয়েও জোর তৎপরতা চলছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পাম্প স্থাপন ইত্যাদির কাজও চলছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে যাবতীয় কাজ চলছে। চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)।
এদিকে, টানেলের এক প্রান্তে অর্থাৎ কর্ণফুলী নদীর উত্তর পাড়ে শহরের পতেঙ্গা এলাকায় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে টোল প্লাজা। এটিও অত্যাধুনিক এবং নান্দনিক বটে। এ টোল প্লাজার কাজও চলছে সমান্তরাল গতিতে। দক্ষিণ প্রান্তে কোন টোল প্লাজা হবে না। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১০ সালে টানেল প্রস্তাবটি উপস্থাপিত হয় ২০১২ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই হওয়ার পর সিসিসিসি’র সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হয়।
এরপর যাবতীয় তৎপরতা নিয়ে গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। অবশেষে ২০১৫ সালে এ প্রকল্পের ভিত্তিফলক স্থাপিত হয়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এ টানেলের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চীনের সাংহাই নগরীর আদলে এই চট্টগ্রামকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ আদলে প্রতিষ্ঠা করার সংকল্প নিয়ে সরকার ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করে কাজ শুরু করে। এরপর থেকে করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও এ প্রকল্পের কাজ একদিনের জন্যও থমকে যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট বহু প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও শ্রমিক নিয়মিতভাবে কাজ করতে না পারায় কাজের গতি হ্রাস পায়। এরপর পুনরায় কাজের গতি বাড়িয়ে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে পুরোদমে প্রকল্পের নানা কার্যক্রম এগিয়ে যায়।
এ টানেলের দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। এ দৈর্ঘ্য সংযোগ সড়কসহ। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। ১০ দশমিক ৮০ মিটার ব্যাসের দুটি টিউবের চারলেনে এই টানেল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ টানেল উদ্বোধনের পর এতে বছরের শুরুতে গাড়ি চলবে ষাট লাখেরও বেশি। পরবর্তী তিন বছরে এর সঙ্গে যুক্ত হবে আরও ১০ লাখ। এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরে যানজট কমে যাবে বহুলাংশে। এছাড়া চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে কক্সবাজারগামী যানবাহন এই টানেল হয়ে চলাচল করবে।
প্রকল্প পরিচালক আরও জানিয়েছেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে দুটি টিউবের চারলেনের কাজ সমাপ্তি হলেও এর সঙ্গে যুক্ত নানাবিধ কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। টোল প্লাজার কাজও একই গতিতে এগিয়ে চলছে। টানেলের দুই প্রান্তের সংযোগ সড়কের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে সরকারি অপর দুটি সংস্থার মাধ্যমে।