দুই দশকের বেশি সময় ধরে ইসলামের নামে জঙ্গিদের উত্থান সারা বিশ্বেই উদ্বেগের কারণ হয়ে আছে। বাংলাদেশেও হুজি, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এমন সব নামে জঙ্গিরা তৎপরতা চালিয়েছে। তাদের হামলায় বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীরও অনেকে প্রাণ হারিয়েছে।
বর্তমানে জঙ্গিদের তৎপরতা কমলেও তাদের অনেকেই নানা জায়গায় ঘাপটি মেরে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিষয়টি আবার সামনে চলে এসেছে কুমিল্লার সাত তরুণের নিখোঁজের ঘটনায়। কথিত হিজরতের নামে কুমিল্লা থেকে গত আগস্টে ঘর ছাড়েন সাত তরুণ। তাঁদের মধ্যে ছয়জন প্রায় দেড় মাসেও উদ্ধার হননি। তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দিন কাটছে আতঙ্কে। সাত তরুণের একজন ফিরে এলেও এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হেফাজতে। প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, গত দেড় মাসে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ ও নান্দাইল উপজেলার বিভিন্ন মাদরাসা থেকে চার শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান মেলেনি। এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাদের স্বজনরা। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে সারা দেশ থেকে শতাধিক কিশোর-যুবা নিখোঁজ হয়েছে বা নিখোঁজ রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৭ জন বিদেশ গিয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে। চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীও রয়েছেন এই তালিকায়। অন্যরা দেশের ভেতর জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত।
জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করা র্যাব ও পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, কথিত হিজরতের নামে ঘর ছেড়ে নিখোঁজ তরুণদের বেশির ভাগ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গিদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। তাদের এই ভুল পথে বা জঙ্গি ফাঁদে ফেলতে অনেক শীর্ষ পর্যায়ের জঙ্গি নেতা নেপথ্যে থেকে তৎপর। এসব তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে দেশের জঙ্গি তৎপরতা থেমে নেই। সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলেছে। অগ্রগতির এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে জঙ্গি দমনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। জনবল ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। তাদের হাতে উন্নত প্রযুক্তি দিতে হবে। জঙ্গি অর্থায়ন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি জঙ্গিবিরোধী জনসচেতনতা বাড়াতে হবে এবং সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তাদের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে আরো বেশি করে সম্পৃক্ত করতে হবে।