বিলের পানি দূষণ রোধ

5

পরিবেশদূষণের কারণে মৃত্যুর দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম। কখনো কখনো প্রথম স্থানও অধিকার করে। তার পরও দূষণ রোধে উদ্যোগ প্রায় নেই বললেই চলে। এখানে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পানিদূষণ, মাটিদূষণ সবই হয় অত্যধিক মাত্রায়।
আমাদের নদীগুলো প্রায় মেরে ফেলা হয়েছে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর আশপাশে থাকা নদীতে মাছসহ জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। ঢাকার চারপাশে থাকা শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, বালু ও তুরাগ এই চারটি নদীর দুর্দশা চরমে। এসব নদী রক্ষায় ২০০৯ সালে উচ্চ আদালত থেকে ১২ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাস্তবতা বলছে, এই নদীগুলোর সঙ্গে সংযোগ আছে এমন খাল-বিলেও আজ মাছ থাকার মতো পরিবেশ নেই।
জানা যায়, পানিদূষণের কারণে গাজীপুরের প্রায় ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বেলাই বিলটির মৎস্যসম্পদ দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ কয়েক বছর আগেও বিলটিতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। এখানকার মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনও করা হতো।
প্রকাশিত খবরে জানা যায়, চারটি উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত বিলটির সঙ্গে তুরাগ, বালু নদসহ ১০-১২টি নদী-খাল-বিলের সংযোগ রয়েছে। আশপাশে দ্রুত শিল্পায়ন হচ্ছে। এসব শিল্প-কারখানা থেকে অপরিশোধিত তরল বর্জ্যরে পাশাপাশি কঠিন বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে নদী-খালে। পানিবাহিত হয়ে বর্জ্য পানি বেলাই বিলেও যাচ্ছে। এই বিলের পাশেও রয়েছে অনেক শিল্প-কারখানা। এসব কারণে শুষ্ক মৌসুমে বিলের পানি প্রায় কালো হয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন জানায়, দূষিত পানির কারণে শুধু মাছ বা জলজ প্রাণীই মরছে না, মানুষও এই পানি ব্যবহার করতে পারে না। পানিতে নামলেই শরীর চুলকায়, ঘা হয়। অথচ আগে এই বিলের পানি স্থানীয় মানুষ খাওয়ার জন্য ব্যবহার করত। বিলের জমিতে ধান বা অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও দ্রুত কমে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, আগে এখানে একরপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ মণ ধান পাওয়া যেত। এখন ৫০ মণও পাওয়া যায় না। এভাবে স্থানীয় জনজীবনে নদীদূষণ বা পানিদূষণের প্রভাব ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।
নদী বা জলাশয়ে শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলা নিয়ে গণমাধ্যমে বহু প্রতিবেদন হয়েছে। বহু আলোচনা ও লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু সেগুলো আমাদের পরিবেশ অধিদপ্তর বা সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে বলে মনে হয় না। আর সে কারণেই শুধু ঢাকা বা গাজীপুরে নয়, সারা দেশেই নদী-জলাশয় দূষণ বা পানিদূষণের চিত্র ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে। মাছ ও জলজ প্রাণী তো বটেই, মানুষের জীবনও ক্রমেই বেশি করে হুমকিতে পড়ছে। আমরা কি এভাবেই চলতে থাকব? কোনো প্রতিকারের চেষ্টা করব না? আমরা চাই বেলাই বিলের পানিদূষণ রোধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া হোক।