কবীর হুমায়ূন
মনটা এখন উদাসীন বড়ো, ঘুরে বেড়ায় সে
স্মৃতিকাতরতা নিয়ে অতীতেই; যেখানে এখনো
পাখ-পাখালিরা ভোরে-সন্ধ্যায়, গান গেয়ে যায়।
ঝিল্লিমুখর সাঁঝের বেলায়, ক্লান্ত পাখিরা
ফিরে আসে উড়ে আপন কুলায় জোড়ায় জোড়ায়।
একটানা সুর বড় সুমধুর ঝিঁ-ঝিঁদের গান,
উন্মন মন উদাসীন হয়! বৃষ্টিমুখর
রাতের বেলায় টিনের চালায় ঝমঝম সুর,
বর্ষারাতের আনন্দতায় স্বপ্ন-মধুর।
ঝাঁক বেঁধে সব কিশোর-কিশোরী নবীন জলের
পরশণ তরে উল্লাসে মাতে আনন্দে। হায়!
কত উচ্ছ্বাসে, শান্ত-স্নিগ্ধ পল্লীর গানে-
চেতনের কথা, জীবনের কথা, ভালোবাসাময়।
রাতের আঁধার নামলে পথেতে শেয়ালের ডাক
হুক্কা হুঁয়া বলে- ‘আমার সকল বন্ধুরা কই?’
মনে পড়ে আজ সন্ধ্যা হলেই ঝোপের আড়ালে
জোনাকি মেয়েরা প্রদীপ জ্বালাতো, সরাতে জমাট
অন্ধকারের কৃষ্ণ চাদর, সারারাতে জেগে।
শিশির পড়ার শব্দেরা আজ জেগে উঠে প্রাণে,
বিহ্বল করে চেতনার সব শিরা উপ-শিরা।
রাখালিয়া বাঁশি, মাঝির কণ্ঠে ভাটিয়ালী সুর;
বহতা নদীর জলের স্বরের মোহনীয় গান,
সবকিছু একে একে মনে পড়ে, বিষণœ হয়
আমার এ প্রাণ, উদাসীন! তাই বিষণœতায়
গেয়ে যাই গান- ‘আনন্দ সব সুদূরে হারালো,
স্মৃতিময়তায় খুঁজে ফিরি তাই বহু বেদনায়;
বুকের ভেতরে কষ্টরা ক্রমে দীঘল রাতের
ঝঞ্ঝাবাতের ভয় এসে আজ দুঃখ জাগায়।