কাজিরবাজার ডেস্ক :
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও যাত্রী সংকটের কারণে লোকসান এড়াতে বরিশাল-ঢাকা নৌপথের লঞ্চগুলোকে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিদিন ঢাকার সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশে তিনটি এবং বরিশাল নদীবন্দর থেকে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশে তিনটি লঞ্চ চলাচল করবে।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি সভা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সংস্থাটির সহ-সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর লঞ্চযাত্রী কিছুটা কমেছিল, তবে তাতে তেমন প্রভাব পড়েনি নৌরুটে। কিন্তু এরপর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি হয়। আমাদের দেশেও যার প্রভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করতে বাধ্য হয় সরকার। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নৌপথের লঞ্চগুলোতেও যাত্রীভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এই ভাড়া বৃদ্ধির পর থেকে যাত্রী হ্রাস পেতে থাকে। কোনো লঞ্চ কোম্পানিই তাদের খরচ ওঠাতে পারছে না।
তিনি বলেন, আমাদের ঋণ নেওয়া রয়েছে, খরচ পুষিয়ে না উঠতে পারলে ব্যাংকের চাপ বাড়বে। তার ওপর এ সেক্টরে সম্পৃক্ত কয়েক হাজার শ্রমিককে নিয়মিত বেতন দিতে না পারলে কর্মও হারাবে তারা। সব মিলিয়ে আমরা লঞ্চ মালিকরা বিপাকে পড়েছি। তাই আমরা আজ বসে বরিশাল-ঢাকা নৌরুট ধরে রাখতে বিভিন্ন উপায় খোঁজার চেষ্টা করেছি।
সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, কোনো কোনো মালিক সরকারের কাছে তেলের জন্য ভর্তুকি চাওয়ার কথা বলেছেন, কেউ বলেছেন লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে আনতে, কেউ বলেছেন লঞ্চ বন্ধ করে সরকারের কাছে উপায় চাইতে। তবে কোনোটিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। বর্তমানে বেশির ভাগ মালিকের মনে হয়েছে লঞ্চের সংখ্যা কমিয়ে যাত্রীসেবা দিলে হয়তো লোকসান কমবে। তবে সেটাও যে এ মুহূর্তে প্রয়োগ হবে এমনটা নয়। আমরা বেঁচে থাকার উপায় খুঁজছি, প্রয়োজনে এ সেক্টরের জন্য সরকারের কাছে জ্বালানি তেলে ভর্তুকির দাবিও জানাতে পারেন মালিকরা। তবে আপাতত লঞ্চ কমিয়ে চালানোর মাধ্যমে লোকসান এড়ানোর চেষ্টা চলবে।
সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ঢাকা বরিশাল রুটের ১৮টি লঞ্চকে ছয়টি গ্রুপে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে ‘ক’ গ্রুপে পারাবত-১১, সুন্দরবন-১১ ও কীর্তণখোলা-২; ‘খ’ গ্রুপে সুরভী-৮, মানামী ও অ্যাডভেঞ্চার-৯; ‘গ’ গ্রুপে সুন্দরবন-১০, পারাবত-১২ ও অ্যাডভেঞ্চার-১; ‘ঘ’ গ্রুপে পারাবত-৯, সুরভী-৭ ও প্রিন্স আওলাদ-১০; ‘ঙ’ গ্রুপে পারাবত-১০, সুন্দরবন-১৬ ও কুয়াকাটা-২ এবং ‘চ’ গ্রুপে সুরভী-৯, পারাবত-১৮ ও কীর্তণখোলা-২০ রয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিদিন ঢাকা সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ ভোর ৫টার মধ্যে বরিশাল নদীবন্দরে পৌঁছাবে এবং বরিশাল নদীবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া তিনটি লঞ্চ সকাল ৬টার মধ্যে ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছাবে। লঞ্চগুলি কোনো অবস্থাতেই পথে অন্য লঞ্চকে ওভারটেক করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার সভাপতি মাহাবুব উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল ও ঢাকা নদীবন্দর নৌযান চলাচল ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক মামুন অর রশিদসহ বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন লঞ্চের মালিকরা।
মানামী লঞ্চের পরিচালক আহমেদ জাকি অনুপম জানান, সংস্থার মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ৪/৫ দিনের মধ্যে হবে। মূলত লোকসান এড়াতে আপাতত আমাদের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া।
একাধিক লঞ্চের মালিক বলেছেন, লঞ্চ বসিয়ে রাখলে ব্যাংকের ঋণের সুদের হার বাড়বে, বাড়বে দায়-দেনা। বর্তমানে প্রতিদিন ৫-৬টি করে উভয় প্রান্ত থেকে ১০-১২টি লঞ্চ চলাচল করছে। তবে অধিকাংশ লঞ্চের কেবিন ও ডেক ফাঁকা থাকছে।