প্রতিবছর গড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বিদেশে, বিশেষ করে ভারতে চিকিৎসা নিতে যায়। এতে বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে যায়। ভারতের এক হিসাবে দেখা যায়, বিদেশ থেকে মেডিক্যাল ট্যুরিজমে যত মানুষ দেশটিতে চিকিৎসা নিতে যায়, তার ৫৫ শতাংশই যায় বাংলাদেশ থেকে।
আবার সাধারণ পর্যটন ভিসায়ও অনেকে ভারতে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকে, এমনকি অস্ত্রোপচারও করিয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। রোগ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির প্রচলন হয়েছে। বিশ্বমানের দক্ষ চিকিৎসকের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। তার পরও এত বেশিসংখ্যক রোগী কেন দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যায়, তা নিয়ে আরো বেশি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে রোগী যাওয়ার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর কারণ নিয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে, সেসব থেকে জানা যায়, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে রোগী ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট রয়েছে। চিকিৎসা ও নার্সিংয়ে অদক্ষতা, আন্তরিকতার অভাব এবং অপেশাদারির অভিযোগও আছে। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগী ও রোগীর স্বজনদের অনেকেই দেশের বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকগুলোতে অতিরিক্ত খরচের অভিযোগ করেছে। চিকিৎসকের কাছে গেলেই একগাদা পরীক্ষার মুদ্রিত ফর্দ ধরিয়ে দেওয়া, সেসব থেকে কমিশন পাওয়া, রোগ পরীক্ষা না করেই রিপোর্ট দেওয়া, প্রয়োজন না থাকলেও আইসিইউতে ঢুকিয়ে দেওয়া, অত্যধিক বিল করা এমন বহু অভিযোগ বহুদিন থেকেই আলোচিত হয়ে আসছে। ভুল চিকিৎসা, ভুয়া চিকিৎসক, করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার মতো অনৈতিক অনেক ঘটনাও ঘটেছে নিকট অতীতে। রোগী বা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে মারপিটের ঘটনার খবরও এসেছে খবরের কাগজে। এসব ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি করে। আস্থার সংকট বাড়ায়। যেসব বেসরকারি হাসপাতালে এমন অভিযোগ নেই, সেসব হাসপাতালে রোগীর যথেষ্ট ভিড়ও রয়েছে।
দেশে সরকারি হাসপাতাল রয়েছে ৬৫৪টি এবং এসব হাসপাতালে মোট শয্যা রয়েছে ৫১ হাজার ৩১৬টি। কিন্তু কয়েকটি হাসপাতাল বাদ দিলে বাকিগুলোর চিকিৎসার মান নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অচল করে ফেলে রাখা হয়। চিকিৎসক থাকেন না। অ্যাম্বুল্যান্স বা অন্যান্য সেবা প্রায় না থাকার মতো। অথচ সরকারি হাসপাতালগুলো সঠিকভাবে পরিচালিত হলে দেশে চিকিৎসাসেবার ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা যেত। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিকিৎসার মানোন্নয়নে আরো নজর দিতে হবে। একই সঙ্গে মানহীন চিকিৎসার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।