কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সোলার প্যানেলের ব্যবহার বেড়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে সোলার প্যানেলের ব্যবহারকারীগণ তাদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ বিশেষ ব্যবস্থায় সরকারের গ্রিডে দিতে পারেন। এমনটি জানিয়েছেন সোলার প্যানেল ব্যবহারকারীর একজন। এদিকে বাজারে সোলার প্যানেলের মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের একটি চতুর শ্রেণী ভাল সোলারের পাশাপাশি বেশি দামে কম মানের সোলার প্যানেল গছিয়ে দিচ্ছে। অনেকে সোলার প্যানেল না চেনার কারণে কম দামের সোলার কিনে ঠকছে। ব্যবসায়ীরা ক্রেতা বুঝে এই সুযোগটি নিচ্ছে। উল্লেখ্য, সরকারীভাবে বলা হয়েছে ব্যবসায়ীগণ নিম্নমানের এনার্জি সেভিংস বাল্বসহ নিম্নমানের সকল ধরনের ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব ও টিউব লাইট বিক্রি থেকে বিরত থাকবেন। সুধীজন বলছেন ব্যবসায়ীরা যাতে নিম্নমানের সোলার প্যানেল বিক্রি করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
দেশে সোলার প্যানেলে বিদ্যুতের ব্যবহার অনেক আগেই শুরু হয়েছে। জমিতে সেচ কার্যক্রমসহ বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই সোলার প্যানেল ব্যবহার হচ্ছে। সরকার সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করেছে। বিদ্যুত সাশ্রয়ে সরকারীভাবে যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তার সঙ্গে সামর্থ্যবানদের সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে উৎসাহিত করা উচিত এমনটি মনে করেন সুধীজন। সমবায়ী ভিত্তিতে সোলার প্যানেল ব্যবহার করতে পারেন মধ্যবিত্ত শ্রেণী। এতে বিদ্যুতের অনেক সাশ্রয় হবে।
বর্তমানে বাজারে তিন ধরনের সোলার প্যানেল বিক্রি হচ্ছে। পুরনো ভার্সনের সোলার প্যানলের নাম পলি। আপডেট সোলার প্যানেলের নাম মনো। লেটেস্ট (সর্বশেষ উন্নত) সোলার প্যানেল বিক্রি হচ্ছে হাফকাট হাইব্রিড নামে। মনো সোলার প্যানেল হাইব্রিড সোলার প্যানেলের মিশ্রণ। হাফকাট হাইব্রিড সোলার প্যানেলের বৈশিষ্ট্য হলো- ছাদে বা জমিতে প্যানেলের অর্ধেকে ছায়া পড়লে বাকি অর্ধেকে প্যানেল এনার্জি (বাতি) দেবে। এই অর্ধেক প্যানেল সূর্যের আলো কম থাকলেও এনার্জি দেবে। লেটেস্ট সোলার প্যনেলগুলো বিশেষ ধরনের কাচের প্রতিফলনে বাড়তি এনার্জি দেবে। এই প্রতিফলনে এনার্জি সংগ্রহ করে রাখতে পারে।
এই বিষয়ে একজন বিদ্যুৎ প্রকৌশলী জানান, বেশিরভাগ গ্রাহকের সোলার প্যানলের আইডিয়া না থাকায় সোলার বিক্রেতাগণ যা বোঝাচ্ছেন তাই বুঝছেন। ফলে ভোক্তারা ঠকছেন। বর্তমানে মনো সোলার প্যানেল ১০ ওয়াট থেকে ৫৬০ ওয়াট পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। একই ওয়াটের হাফকাট প্যানেল বিক্রি হচ্ছে ৭শ’ মেগাওয়াট পর্যন্ত। বিক্রেতারা পুরনো মডেলের পলি প্যানেলগুলোকে লেটেস্ট বলে বিক্রি করছে। যাদের সোলার সম্পর্কে ধারণা আছে তাদের ঠকাতে পারছে না। কারণ তারা সোলারের কাচ ও পয়েন্ট দেখে সোলার কিনছেন।
এই বিষয়ে সোলার বিশেষজ্ঞ শফিউল জানান, মানভেদে প্রতি ওয়াট সোলার বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা। ধরা যাক আপনার বাড়িতে প্রতিদিন এক হাজার ওয়াটের বিদ্যুৎ সামগ্রী ব্যবহার হয়। আপনার দরকার দুই কিলোওয়াট সোলার। ভাল উন্নতমানের সোলারের জন্য আপনার খরচ হবে অন্তত এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। এই দুই কিলোওয়াটের বিদ্যুতের মধ্যে এক বা দেড় কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। বাকি এক বা আধা কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ইন্টারনেট বা নেট মিটারিং সিস্টেমে বিদ্যুৎ গ্রিডে দিতে পারেন। এভাবে অধিক সোলার ব্যবহারকারী বাড়তি বিদ্যুৎ গ্রিডে দিতে পারেন। এই বিদ্যুতের মূল্য এ্যাডজাস্ট করা হবে ব্যক্তিদের বিদ্যুৎ বিলের মাধ্যমে। কারণ রাতে তারা গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন। বিল থেকে যে পরিমাণ সোলার বিদ্যুৎ দিয়েছেন সেই পরিমাণ বাদ যাবে। সূত্র জানায়, ভারতে সোলার প্যানেলের বিদ্যুতের ব্যবহার এভাবে হচ্ছে। সোলার প্যানেল ব্যবহারকারীগণ বাড়তি বিদ্যুৎ তাদের গ্রিডে দিচ্ছে।
বাংলাদেশে এই ব্যবস্থা চালু হলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। সোলারের বিদ্যুৎ সমবায়ী ভিত্তিতে ব্যবহার করা যায়। কয়েক ব্যক্তি মিলে বিভিন্ন ওয়াটের সোলার প্যনেল কিনে আলাদা ইনপুট ইনভার্টার ব্যাটারিতে সংযোগ দিতে পারেন। আবার ব্যাটারি ছাড়াই ইনপুট ইনভার্টার কানেক্ট করতে পারেন। যে পদ্ধতিতেই হোক সোলার এনার্জি বিদ্যুত স্থাপন করে দেবে।
সোলার বিদ্যুতের কানেকশন এমনভাবে দেয়া থাকবে লোডশেডিংয়ে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনা আপনি জ্বলে উঠবে। সরাসরি সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। এতে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে। যাদের প্রিপেইড মিটার আছে সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিটার রান করবে না। সোলার থেকে সংগৃহীত বিদ্যুৎ ব্যাকআপ হিসেবে রাখা যাবে। সোলার প্যানেলে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ানো গেলে বিদ্যুৎ সমস্যা অনেকটা দূর হবে। বিদ্যুতায়িত সেচে অনেক আগেই সোলার ব্যবহার শুরু হয়েছে। এই বিদ্যুতে লাইট, ফ্যান, এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ-ওভেন এবং আয়রনও চালানো যাবে। আপনি কত বিদ্যুৎ খরচ করবেন তা নির্ভর করবে আপনি কত ওয়াটের সোলার প্যানেল বসিয়েছেন।
