৩শ’ টাকার দাবিতে এবার চা শ্রমিকরা শিশু সন্তানদের নিয়ে আন্দোলন

3
৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে এবার চা শ্রমিকরা শিশু সন্তানদের নিয়ে আন্দোলন। ছবি- মামুন হোসেন

স্টাফ রিপোর্টার :
দৈনিক মজুরি ৩শ’ টাকার দাবিতে এবার শিশু সন্তানদের আন্দোলনে শামিল করলেন চা শ্রমিকরা। গতকাল বুধবার আন্দোলনের ১৬তম দিনে মালনীছড়া চা বাগানে আন্দোলনরত শ্রমিকরা শিশু সন্তানদের সামনে রেখে কর্মবিরতি পালন করেছেন।
এ সময় শিশুরাও শ্লোগান দিতে থাকে ‘৩০০ টাকা মজুরি দাও, নাইলে বিষ দাও’/ ‘বাঁচার মতো বাঁচতে চাই, ন্যায্য মজুরি ৩০০ টাকা চাই’।
চা শ্রমিক নেতারা জানান, অন্যান্য দিনের মতো বুধবারও শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। তবে শিশু সন্তানদের আন্দোলনে শামিল করা অনেকে মেনে নিতে পারেননি। খোদ চা শ্রমিক নেতাদের অনেকেও এটা সমর্থন করছেন না।
অভিযোগ রয়েছে, সহানুভূতি আদায়ের জন্য এবার শ্রমিকদের পক্ষে একটি মহল শিশুদের ব্যবহার করছে। চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু গোয়ালা বলেন, আমরা কখনো শিশুদের আন্দোলনে ব্যবহার করিনি। আন্দোলন এখন আর আমাদের হাতে নেই, বাইরে থেকে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা প্রয়োজন, তাই বলে নাক কেটে নয়। এই কর্মবিরতির পক্ষেও আমি নই। আর শিশুদের আন্দোলনে কখনো নামাইনি।
শ্রমিক নেতাদের অনেকে জানান, মালনীছড়া চা বাগানে রাগিব রাবেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিতেশ মোদি প্রায় সময় আন্দোলনে শিশুদের ব্যবহার করেন। এবারো ঢাল হিসেবে তিনি আন্দোলনে নামিয়েছেন।
চা শ্রমিকজ নেতা রাজু গোয়ালা আরও বলেন, শ্রমিকদের আকাঙ্ক্ষা প্রধানমন্ত্রী কথা বলুক। তিনি লাইভে অথবা গণমাধ্যমে তাদের আশ্বস্থ করে কাজে ফেরার কথা বললেই শ্রমিকরা কাজে যাবে। গত মঙ্গলবার সিলেট ভ্যালির আওতাধীন ২৩টি চা বাগানের পঞ্চয়েত কমিটি বসে এই সিদ্ধান্ত নেয়।
কিন্তু এ অবস্থায় গতকাল বুধবার শিশুদের আন্দোলনে নামিয়ে অনেকটা বিতর্কের জন্ম দেন চা শ্রমিকরা। তবে এ জন্য স্কুল শিক্ষক রিতেশ মোদিকে দায়ী করেছেন অনেকে।
এ বিষয়ে রিতেশ মোদি বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নামাইনি। দুপুরে স্কুল ছুটির পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে চা শ্রশ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সাথে বৈঠক শেষে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন পঞ্চায়েত প্রধানরা। সাধারণ শ্রমিকদের সঙ্গে ৩শ’ টাকা মজুরির দাবিতে একমত পোষণ করেন ইউনিয়নের নেতারাও। দুই দফা অবরোধ প্রত্যাহারের পর আবারো বেঁকে বসেছেন চা শ্রমিকরা। কাজে ফেরার শর্ত হিসেবে এবার তারা প্রধানমন্ত্রীর মুখের কথা শুনতে চান। হোক ভার্চ্যুয়ালি কিংবা মিডিয়ার মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিলেই তারা কাজে ফিরে যাবেন।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার স্কুল চৌমহনী রেল লাইন অবরোধ করেন চা শ্রমিকরা। মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ থেকে দুইদিন ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করে আসছিলেন চা শ্রমিকরা। কিন্তু তাদের এ দাবিতে মালিকপক্ষ সায় না দেওয়াতে ১৩ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যান। এরপর দেশের ১৬৮টি বাগানে (ফাঁড়ি চা বাগানসহ ২৩২টি) ছড়িয়ে পড়েছিল এ আন্দোলন। চা শ্রমিকরা তাদের দৈনিক কাজ বন্ধ রেখে নেমে পড়েন মহাসড়কে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে বাগানে বাগানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ সমাবেশ করে আসছেন তারা। গত শনিবার শ্রম অধিদপ্তরের মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৪৫ টাকা মেনে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু তাতে বেঁকে বসেন শ্রমিকরা। তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ওই দিন বিকেলে তারা ফের আন্দোলন শুরু করেন। রাতে সিলেট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও শ্রমিকদের বিভক্তির কারণে কর্মবিরতি অব্যাহত থাকে।