ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল ওসমানী হাসপাতাল ॥ ২ মামলায় ২ জন গ্রেফতার, ক্লাস পরীক্ষা বর্জন, ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা

9

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক হামলার ঘটনায় প্রশাসনের সাথে বৈঠকে সমঝোতা না হওয়ায় ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন আন্দোলনরতরা। পরে তারা হাসপাতাল প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
এদিকে, দাবি আদায়ে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। তবে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ধর্মঘট ডাকলেও চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
অপরদিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের ২ ছাত্রের ওপর হামলার ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেছে। অন্যদিকে গত শনিবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিক্ষানবিশ এক চিকিৎসককে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগ এনে পৃথক আরেকটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে এ দুটি মামলা করা হয়। দুই মামলায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ইয়াসিন খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষানবিশ চিকিৎসক ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে হওয়া মামলার বাদী হয়েছেন হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফ। অভিযোগে একজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে। দুই ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় হত্যাচেষ্টার অভিযোগে হওয়া মামলার বাদী কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহমুদুল রশীদ। ওই মামলায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামী করা হয়েছে।
জানা যায়, গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ গেটের পাশে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হন কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র নাইমুর রহমান ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথ। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনার প্রতিবাদে আহত ছাত্রদের সহপাঠী ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে সোমবার রাতে প্রায় ৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। সে সঙ্গে হামলায় জড়িত ব্যক্তিরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিকে ২ ছাত্রের ওপর হামলার ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরাও সোমবার রাতে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন। অবশ্য দিবাগত রাত পৌনে ৩টার দিকে হামলার ঘটনায় জড়িত দু’জনকে গ্রেফতারের পর জানানো হয়, শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা জরুরী বিভাগ ও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাসেবা চালু রাখবেন।
গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, নগরীর মুন্সিপাড়ার মৃত রানা আহমদের পুত্র সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের পুত্র এহসান আহমদ (২২)। এ দুজনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত বলে জানা গেছে। এ দুজনের মধ্যে সাঈদ হাসান রাব্বি মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজের সম্মেলন কক্ষে হাসপাতাল, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতারা বৈঠকে বসেন। এতে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. মঈনুল হক, মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ প্রমুখ। বৈঠকে কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে দু’জনকে আটক করা হয়েছে। বাকীদের আটকের চেষ্টা চলছে। কলেজ ও হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রশাসনের কর্তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা হামলাকারী সকলকে গ্রেফতারের পূর্ব পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে বৈঠক থেকে চলে আসেন।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মতিউর রহমান বলেন, হামলাকারী সকল আসামি গ্রেফতার এবং শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাবো। সেবা দিতে এসে আমরা হামলা ও হয়রানির শিকার হতে রাজী নই।
এদিকে দাবি পুরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেডিক্যাল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী অমিত হাসান সানি। তিনি বলেন, শনিবার হাসপাতালে শিক্ষানবিশ এক চিকিৎসকের সঙ্গে রোগীর স্বজন পরিচয়ে কয়েকজন তরুণ বাগবিতন্ডা করেন। সে সময় ওই চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকেরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে ওই তরুণদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। এর জেরে সোমবার রাতে ২ ছাত্রের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমরা ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের সব দাবির সাথে একমত। তাদের দাবি পুরণে আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছি। তবে সব দাবি পুরণে কিছুটা সময় লাগবে। আমরা তাদের কাছে এই সময়টুকু চেয়েছি। এখনও আন্দোলনকারীদের বুঝানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।