২০০০ থেকে ২০১৫ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার ২০২১ সালের ৫ আগষ্ট সংখ্যায় একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে ২০০০ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে। মানবিক সহায়তা দেওয়া দেশ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে নিয়ে একটি যৌথ মিশনের বন্যাদুর্গত এলাকা সফরের পর জাতিসংঘ, ব্রিটিশ হাইকমিশন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ের বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৯ জেলায় প্রায় ৭২ লাখ মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলাগুলো হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ ও শেরপুর।
ওই ৯টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ জেলা সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে দেশের বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সারা দেশে গত ১৭ মে থেকে ২৬ জুলাই পর্যন্ত বন্যাজনিত বিভিন্ন রোগে ২৪ হাজার ৮৩৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে ১৩১ জন। মৃতদের মধ্যে সুনামগঞ্জে ২৯ জন, সিলেট ও নেত্রকোনায় ২০ জন করে, হবিগঞ্জে ১৬ জন, জামালপুরে ১০ জন, লালমনিরহাটে ৯ জন, মৌলভীবাজারে আটজন, শেরপুরে সাতজন, ময়মনসিংহে ছয়জন, কুড়িগ্রামে পাঁচজন এবং টাঙ্গাইলে একজন রয়েছে।
পানি কমতে থাকায় এরই মধ্যে মানুষ আশ্রয়শিবির ছেড়ে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু অনেকেরই থাকার ঘর পড়ে গেছে। অনেকের ঘরের চাল বানের পানিতে ভেসে গেছে। অন্যদিকে বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়ে ওঠায় ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে পেটের পীড়া। শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। সেই সঙ্গে আছে সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়া।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে বর্ষাকালীন রোগ ও বন্যাজনিত অসুস্থতায় বিপর্যস্ত মানুষ। এমনিতেই রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘরে ঘরে মানুষ ভুগছে কোনো না কোনো রোগে। বর্ষাজনিত জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েডের মতো রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। নানা রোগে মৃত্যু বাড়ছে প্রতিদিন। বিশেষ করে ডায়রিয়া নিয়ে এবার বেশি উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ। বন্যায় হাওর অঞ্চলে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগগুলো খুব মারাত্মক আকার ধারণ না করলেও একেবারে উপেক্ষাও করা যাবে না।
এখন রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দেওয়া দরকার। কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে বেগ পেতে হচ্ছে। রোগের প্রাদুর্ভাব আশঙ্কাজনক পর্যায়ে না গেলেও বন্যায় রাস্তাঘাটের ক্ষতিসহ যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় নিয়মিত রোগীদেরও চিকিৎসার জন্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বন্যা-পরবর্তী সময়ে রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। করোনার সঙ্গে বন্যা ও বর্ষাজনিত রোগ স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য বাড়তি চাপ। পরিস্থিতি সামলাতে প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও সামাজিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।