সমুদ্রবন্দর রক্ষা করা হউক

3

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে বলা হয় বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ। দেশের আমদানি-রপ্তানি বা বৈদেশিক বাণিজ্যের ৯২ শতাংশই সম্পন্ন হয় এই বন্দরের মাধ্যমে। দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের যত প্রসার ঘটছে, এই বন্দরের ব্যস্ততা ততই বাড়ছে। কিন্তু সবচেয়ে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা।
সম্প্রতি সুতা ও মেশিনারিজ ঘোষণায় আনা যে দুই কনটেইনার থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়েছে, সেই কনটেইনার দুটি স্ক্যানিং ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব। গত শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় অভিযান চালিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা মদভর্তি দুটি চালান জব্দ করেন। কুমিল্লা ইপিজেডের হ্যাসি টাইগার কম্পানি লিমিটেড মেশিনারি এবং পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডের বিকেএইচ টেক্সটাইল লিমিটেডের নামে সেলাই মেশিনের ববিন আমদানির ঘোষণা দিয়ে মদভর্তি কনটেইনার দুটি আনা হয়েছিল। সেখান থেকে মোট ৩৬ হাজার ৮১৬ বোতল মদ উদ্ধার করা হয়েছে। র‌্যাব বলছে, গার্মেন্ট পণ্যের মিথ্যা ঘোষণায় এই মদ আমদানির পেছনে রয়েছে মুন্সীগঞ্জকেন্দ্রিক একটি চক্র, যাদের নেটওয়ার্ক দুবাই পর্যন্ত বিস্তৃত। চলতি বছরেই তারা আরো তিনটি চালানে মিথ্যা ঘোষণায় প্রায় ৪৮ হাজার বোতল বিদেশি মদ এনেছে। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যরে কনটেইনার দুটি চট্টগ্রাম বন্দরের এক নম্বর গেট দিয়ে বের করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে স্ক্যানিং ছাড়া এই বিপুল পরিমাণ মালামাল চলে এলো। আর যদি স্ক্যানিং হয়, তাহলে এই বিপুল পরিমাণ মদ কী করে গার্মেন্ট পণ্য ঘোষণায় ঢাকার পথে এলো?
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হওয়ার পর মদভর্তি দুটি চালান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় আটকের ঘটনায় করা মামলায় দুই আসামিকে তিন দিন এবং এক আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রাম বন্দরে একের পর এক মদভর্তি কনটেইনার জব্দ হওয়ার বিষয়ে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বারবার ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানগুলোর আইপি ব্যবহার করে মদের চালান আনার খবরে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে বেপজা।
শুধু ইপিজেডের ভাবমূর্তি নয়, চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। দুটি চালান ধরা পড়েছে, এমন কত চালান বাইরে বেরিয়ে গেছে তার হিসাব কে দেবে? বন্দরের নিরাপত্তা ভেদ করে আমদানি পণ্য বেরিয়ে যায় কী করে?