প্রতি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৩২ জন ॥ সংসদের শূন্য তিন আসনের উপ-নির্বাচন

21

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শূন্য হওয়া তিন সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে চান আওয়ামী লীগের ৯৪ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এই উপ-নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি তিনটি আসনে দলীয় প্রার্থী দিলেও নৌকার মাঝি যে হবেন, তার বিজয় নিশ্চিত। তাই জাতীয় সংসদের তিনটি শূন্য আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে একটি আসনের বিপরীতে প্রায় ৩২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী। স্থানীয় পর্যায়ের নেতা শুরু করে জেলা-উপজেলা, কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন প্রয়াত তিন সংসদ সদস্যের সহধর্মিণী ও পরিবারের সদস্য, আমলা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, প্রবাসীসহ সবাই। এমনকি এমপি হতে বিএনপির দু’জন সাবেক নেতাও মনোনয়ন নিতে এসে ফিরে গেছেন বলেও জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের দফতর সেল থেকে জানা গেছে, গত ৪ জুন থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ছয়দিন মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র বিতরণ করে আওয়ামী লীগ। একই সময়ে জমাও নেয়া হয়। গত সাতদিনে এই তিনটি আসনের বিপরীতে ৯৪টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। তিন আসনের মধ্যে ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নের জন্য আবেদনপত্র সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন ৩৪ জন। এছাড়া কুমিল্লা-৫ আসনে ৩৫ জন এবং সিলেট-৩ আসনে ২৫ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
আগামী ১৪ জুলাই শূন্য হওয়া ঢাকা-১৪, সিলেট-৩ এবং কুমিল্লা-৫ আসনের উপ-নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারীতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার এই তিনটি আসনের উপ-নির্বাচন ১৩ দিন পিছিয়ে আগামী ২৮ জুলাই ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামীকাল শনিবার অর্থাৎ ১২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী বাসভবন গণভবনে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ ১৩ দিন পিছিয়ে দেয়ায় সংসদীয় বোর্ডের সভা আগামীকাল, নাকি কিছুটা পিছিয়ে দেয়া হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত আগামীকাল শনিবার সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক রয়েছে।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় বোর্ডের সভাতেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে তিনটি আসনে দলীয় একক প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হবে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং দলের সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও দলের মাঠ জরিপের রিপোর্টকে সামনে রেখে তিনটি আসনে অধিকতর যোগ্য প্রার্থীর হাতেই নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হতে পারে।
তিনবারের সংসদ সদস্য আসলামুল হক আসলামের মৃত্যুর কারণে ঢাকা-১৪ আসন শূন্য হয়। পাঁচবারের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু’র মৃত্যুতে কুমিল্লা-৫ এবং তিনবারের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যাওয়ায় সিলেট-৩ আসনটি শূন্য হয়। এই তিনটি আসনের উপ-নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ জুলাই।
শূন্য হওয়া এই তিনটি সংসদীয় আসনই দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে আওয়ামী লীগের দখলে। আর বিএনপি নির্বাচন না করার সিদ্ধান্তের কথা আগেই জানিয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী অর্থাৎ নৌকার মাঝি যেই হবেন তার বিজয় সুনিশ্চিত। এ কারণে তিনটি আসনেই বিপুলসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে নেমেছে। এমনকি যাদের নির্বাচনী এলাকায় ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা কিংবা জনসম্পৃক্ততা নেই, তিনিও দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে পোস্টার-ব্যানার-ফেস্টুন নির্বাচনী এলাকায় সাঁটিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জাহির করতেও দেখা গেছে।
এমনকি, দলের নেতাকর্মীরা ছাড়াও বিএনপির দু’জন সাবেক নেতাও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনতে এসে বিফল হন। বিএনপি থেকে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ এবং বিএনপি সমর্থিত সাবেক সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার চলচ্চিত্র তারকা মনোয়ার হোসেন ডিপজল ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য না হওয়ায় এখলাস উদ্দিন মোল্লাহকে দলের মনোনয়ন ফরম দেয়া হয়নি। এ অবস্থা দেখে মনোনয়ন ফরম কিনতে এসেও চলচ্চিত্র তারকা ডিপজল ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির অফিসের সামনে থেকে ফিরে যান বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে অভিনেতা ডিপজল ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের দলীয় ফরম কিনেছিলেন।
তবে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একটি আসনের বিপরীতে বিপুলসংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়াকে তারা খারাপ চোখে দেখছেন না। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল পরিবার, প্রতিটি আসনেই দলের একাধিক যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে যারা দক্ষ, স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়, দলের জন্য ত্যাগ রয়েছে- সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এমন যোগ্য প্রার্থীর হাতেই নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে মাঠের প্রকৃত চিত্র ও বিভিন্ন সংস্থার মাঠ জরিপ রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হবে।
ঢাকা-১৪ আসনে ৩৪ জন : ঢাকা-১৪ আসনে বৃহস্পতিবার শেষদিন পর্যন্ত ৩৪ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনূল হোসেন খান নিখিল, সাবেক নারী সংসদ সদস্য ও যুব মহিলা লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি সাবিনা আকতার তুহিন, সেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, প্রয়াত সংসদ সদস্য আসলামুল হকের স্ত্রী মাকসুদা হক রয়েছেন।
এ আসন থেকে আরও মনোনয়ন ফরম কিনেছেন- এবিএম মাজহারুল আনাম, ফরিদুল হক হ্যাপি, আগা খান মিন্টু, মিজানুর রহমান, আরিফ আহমেদ চৌধুরী, শাহজাহান দেওয়ান, লুৎফর রহমান, খন্দকার শফিউল আজম, শিরিন রুখসানা, মিনা মালেক, একেএম দেলোয়ার হোসেন, এ কে এম মতিউর রহমান, এস এম হানিফ, হাসানুর রশীদ, হায়দার আলী খান, রাজিয়া সুলতানা ইতি, আলী আশরাফ, জিল্লুর রহমান, আবদুর রউফ সিদকার, মুহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, দেওয়ান আবদুল মান্নান, বশির আহমেদ, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ, শেখ মামুনুল হক, শহিদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, সর্দার মোহাম্মদ মান্নান, ওয়াছিকুর রহমান ইমরান ও মোহাম্মদ ইমরুল কায়েস।
সিলেট-৫ আসনে ২৩ জন : সিলেট-৫ আসনে শেষদিন পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন জন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিজবাহ উদ্দিন সিরাজ, প্রয়াত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর সহধর্মিণী ফারজানা চৌধুরীসহ বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন।
আরও যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তারা হলেন- এনাম উল ইসলাম, শামীম ইকবাল, হাবিবুর রহমান, হাজী সাইদুল আলম, এম সদরুল আহমেদ খান, সেলিম আহমদ, আবদুল শহীদ কাজল, মোহাম্মদ বদরুল ইসলাম, ইহতেশামুল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ আবু জাহিদ, জাহেদ হাসান, আবদুর রকিব, শাহ মুজিবুর রহমান জকন, তাহমিনা আহমেদ, আবদুল বাছিত টুটুল, হোসাইন আহমদ, কফিল আহমদ চৌধুরী, শমসের জামাল, মোহাম্মদ মতিউর রহমান, মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ওবায়দুর রহমান, কবীর উদ্দীন আহমেদ ও দেওয়ান গৌছ আলী সুলতান।
কুমিল্লা-৫ আসনে ৩৫ জন : কুমিল্লা-৫ আসনে সর্বাধিক ৩৫ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। এরমধ্যে প্রয়াত সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু’র সহধর্মিণী সেলিমা সোবহান খসরুও রয়েছেন। আরও যারা মনোনয়ন কিনেছেন তারা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি মোঃ শাহ জালাল, এস এম জাহাঙ্গির আলম, হেলেনা জাহাঙ্গির, আবদুল মমিন ফেরদৌস, সোহরাব খান চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, জাহাঙ্গির খান চৌধুরী, আবু ছালেক (সেলিম রেজা সৌরভ), জাহেদুল আলম, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মানিক, দিদার মোঃ নিজামুল ইসলাম, শাহিদা বেগম, আবুল হাসেম খান, জাহাঙ্গির আলম সরকার, আনিসুর রহমান, আবদুল বারী, এম এ মতিন এমবিএ, আল আমীন, এম এ জাহের, মাহতাব হোসেন, জিয়াউল হাসান মাহমুদ, নওশের আলম, আল আমিন, মোস্তফা কামাল, আখলাক হায়দার, আবদুছ ছালাম বেগ, মোহাম্মদ ফারুক আহাম্মদ, রেজাউল করিম, আবদুল জলিল, এহতেশামুল হাসান ভুঁইয়া, জান্নাতুল ফেরদৌস, মোহাম্মদ তরিকত উল্লাহ, মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন ও এম এ জলিল ভুঁইয়া।