বন্যার পানি যত নামছে, তত বেশি করে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র। শুধু সুনামগঞ্জ জেলায় দুই হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে ১২০টি কালভার্ট। সিলেট জেলার অবস্থাও একই রকম।
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। চলতি মৌসুমে দুই দফা বন্যায় জমিতেই বোরো ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সর্বশেষ বন্যায় বাড়িঘর, দোকানপাট ও গুদামে সংরক্ষিত ধান-চালেরও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। ঘরদোর বিধ্বস্ত হয়েছে। গবাদি পশু, হাঁস-মুরগির খামারের ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, উপদ্রুত এলাকাগুলোতে মানুষ প্রায় সর্বস্ব হারিয়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। এর পরও উপদ্রুত এলাকাগুলোতে মানুষের হাহাকার চরমে উঠেছে। তার একটি বড় কারণ রাস্তাঘাট চলাচলের উপযোগী না থাকায় দুর্গম এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না।
কয়েক দশকের মধ্যে এবারের বন্যার ভয়াবহতা ছিল অনেক বেশি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও মেঘালয়ে ব্যাপক বন্যা দেখা দেয়। সেখানে বন্যায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। সেই দুই রাজ্যের পানি নেমে আসায় এবং একই সঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশেও প্রবল বন্যা দেখা দেয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশেও বন্যায় ৭৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। প্রথম দফা বন্যায় হাওর ও নিচু এলাকায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। দ্বিতীয় দফা বন্যায় পাট, বাদাম ও অন্যান্য ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে মানুষের বাড়িঘরে সংরক্ষিত ধান-চাল ও অন্যান্য সম্পদের। এমনকি সরকারি-বেসরকারি খাদ্যগুদামে রাখা খাদ্যশস্যেরও ক্ষতি হয়েছে। শুধু সিলেট ও সুনামগঞ্জে ১৯টি সরকারি খাদ্যগুদামে পানি ঢুকে যায়। ক্ষতি হয় কয়েক হাজার টন ধান ও চালের। বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনে হাজার হাজার বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সরকারিভাবে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনো করা হয়নি। ধারণা করা হয়, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ফসল ও অন্যান্য ক্ষতি আমলে নিলে সেই অঙ্কটি অনেক বড়ই হবে।
পানি কমতে থাকায় এরই মধ্যে মানুষ আশ্রয়শিবির ছেড়ে বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু অনেকেরই থাকার ঘর পড়ে গেছে। অনেকের ঘরের চাল বানের পানিতে ভেসে গেছে। অন্যদিকে বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। ফলে ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে পেটের পীড়া। শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। সেই সঙ্গে আছে সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়া। এই অবস্থায় উপদ্রুত এলাকাগুলোতে মানুষ চরম অসহায় দিন কাটাচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা জরুরি হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে সেই নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব রাস্তাঘাট মেরামতের উদ্যোগ নিতে হবে। উপদ্রুত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে এবং দুর্গম এলাকাগুলোতেও এই সহায়তা পৌঁছে দিতে হবে।