কাজিরবাজার ডেস্ক :
গন্তব্য ফরিদপুরের ভাঙ্গা। কথা ছিল রবিবার ভোর ৬টায় খুলে যাবে গেট। তবে অপেক্ষমাণ হাজারো গাড়ির ক্লান্তি ঘোচাতে ১০ মিনিট আগেই খুলে দেয়া হয় মাওয়া প্রান্ত থেকে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়ার টোলপ্লাজা। আর তখনই প্রথম যাত্রীবাহী পরিবহন হিসেবে পদ্মা সেতু পাড়ি দেয় একটি বাস। বাসপ্রেমীদের সংগঠন বিডি বাস লাভারের সদস্যরা পদ্মা সেতু পাড়ি দিতেই আয়োজন করে এ স্বপ্নযাত্রার। একইভাবে রবিবার সকাল ৬টায় টোলপ্লাজা খুলতেই সেতুর জাজিরা প্রান্তে প্রথম টোল দিয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে প্রথম সেতুতে ওঠেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা এবিএম জাফর উল্লাহ। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তেই ভোর থেকে পণ্যবাহী ট্রাকের পাশাপাশি বাস, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারের দীর্ঘ সারি। এরমধ্যে মোটরসাইকেলের উপস্থিতি দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি। জাজিরা প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ সারি আর পথচারীর ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও হিমশিম খেতে হয়েছে। তবে যারা টোল দিয়ে সেতুতে ওঠেন, তাদের মধ্যে ছিল বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস, আনন্দ। অনেকেই জানিয়েছেন, পদ্মা পাড়ি দিয়ে মাওয়ায় নাস্তা, খুলনায় ফিরে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন। আবার অনেকেই বলেছেন, বরিশাল থেকে পদ্মা সেতু হয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টায় এসেছেন ঢাকায়। সেতু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথম ৮ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ১৫ হাজার ২০০টি গাড়ি চলাচল করেছে। একই সময়ে টোল আদায় হয়েছে ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকা।
বাসপ্রেমীদের সংগঠন বিডি বাস লাভারের সদস্যরা পদ্মা সেতু পাড়ি দিতেই স্বপ্নযাত্রার আয়োজন করে গত শনিবার রাতে। সঙ্কল্প ছিল যে কোন মূল্যে সবার আগে পাড়ি দিতে হবে সেতু। তাই রাত ১২টার আগেই রাজধানীর শাহবাগ থেকে শুরু হয়েছিল যাত্রা। বাসটি সেতুর সংযোগ সড়কে এসে পৌঁছে রাত পৌনে ১টায়। শুরু হয় অপেক্ষার পালা। কখন হবে ভোর, কখন খুলবে গেট, যেন তর সইছিল না তাদের। তবে প্রথম গাড়ি হিসেবে সেতুতে উঠতেই ছিল বাধা। মোটরসাইকেলের ভিড়ে অপেক্ষায় থাকতে হয় অনেকক্ষণ। বাস আরোহী মেহেদী বারবার দৃষ্টি রাখছিলেন, তাদের বাসের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলা সৌদিয়া পরিবহনের বাসটিতে। কারণ টোলপ্লাজায় সাতটি গেট। যেন কোনমতেই সেটি তাদের আগে সেতুতে উঠতে না পারে। ড্রাইভারকে ডানে বাঁয়ে করে গাইড করছিলেন আবীর নামের এক তরুণ। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সকাল ৬টা ১২ মিনিটে সেতুর টোল হিসেবে দুই হাজার টাকা পরিশোধ করেন চালক। তখন রাজ্যের উচ্ছ্বাস নেমে আসে ৪০ আসনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসটিতে। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন সবাই। চোখে মুখে অদ্ভুত এক আনন্দ নিয়ে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন চালক তৌহিদুর রহমান বাবুল। এক যুগের বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন রুটে যাত্রী পরিবহনে কাজ করছেন তিনি। তৌহিদুর বলেন, ‘খুবই আনন্দ লাগতেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেক ধন্যবাদ। উনাকে আল্লাহ দীর্ঘ আয়ু দিক। আর দক্ষিণবঙ্গের মানুষের স্বপ্নপূরণ হয়েছে, আর ফেরিঘাটে চালকদের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হইছে।’ সেতু পাড়ি দেয়া প্রথম বাসের যাত্রী হিসেবে দারুণ উৎফুল্ল ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ বিডি বাস লাভারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাখাওয়াত অনিন্দ্য। নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তার দাবি, স্বাধীন বাংলাদেশের পর এটিই দেশের সেরা অর্জন। তিনি বলেন, ‘গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পাড়ি দেয়ার উচ্ছ্বাস নিয়েই আমার আসা।’ পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই স্বপ্নটা ছিল বলেও জানান অনিন্দ্য। তিনি বলেন, ‘এটা তো আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এটা স্বপ্নের যাত্রা। মনে হচ্ছে স্বপ্নের যাত্রা বাস্তবায়ন হচ্ছে। স্বপ্নের ভেতরে আছি।’
একইভাবে রবিবার সকাল ৬টায় টোলপ্লাজা খুলতেই সেতুর জাজিরা প্রান্তে প্রথম টোল দিয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে সেতুতে ওঠেন সাবেক পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা এবি এম জাফর উল্লাহ। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’ জাজিরা প্রান্তে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ জানান, ‘রাত ১২টা থেকেই গাড়ি নিয়ে লোকজন এসেছে। আমরা টোলপ্লাজার কাছাকাছি তাদের থামিয়ে দিয়েছি।’ রবিবার সকাল ৬টায় টোলপ্লাজা খুলে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আগে সেতুতে ওঠার চেষ্টা। মোটরসাইকেলে কে আগে বা পরে সেতুতে উঠেছে সেটা বোঝা ছিল কঠিন। তবে প্রাইভেটকার নিয়ে প্রথম জাজিরা টোলপ্লাজা অতিক্রম করেন গোপালগঞ্জের জাফর উল্লাহ। এক সময় পুলিশে চাকরি করা জাফর উল্লাহ এখন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে নিয়োজিত। তিনি বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পরে আমি প্রথম প্রাইভেটকার চালিয়ে টোল দিয়ে সেতু পার হয়েছি, অনুভূতিটা সত্যিই অন্যরকম।’ জাফর গোপালগঞ্জ থেকে রাতে রওনা হলেও সেতু বন্ধ থাকায় পার হতে পারেননি। সারারাত বসে থেকে সকালে টোল দিয়ে তিনি সেতু পার হন। এতদিন ফেরিঘাটে যানজট আর ভোগান্তি সঙ্গী করে পদ্মা পার হতে হয়েছে, খরস্রোতা পদ্মার ভয়াল রূপও দেখেছেন বহুবার। জাফরের ভাষ্য, ‘বহু কষ্ট করে এই রুটে এতদিন চলেছি। আজকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আমি প্রথমে প্রাইভেটকার চালিয়ে যাচ্ছি, এর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।’ তার মতো হাজারও মানুষ রাত থেকে অপেক্ষায় ছিলেন পদ্মার টোলপ্লাজা খুলে দেয়ার অপেক্ষায়। জাজিরা প্রান্তে যানবাহনের দীর্ঘ সারি আর পথচারীর ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও হিমশিম খেতে হয়েছে। রবিবার সেতুর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে প্রথম যাত্রীবাহী বাস নিয়ে টোলপ্লাজা অতিক্রম করেন টাঙ্গাইলের মোঃ হানিফ। পুলিশ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ জানান, খুলনা থেকে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস নিয়ে জাজিরা প্রান্তে টোল দিয়ে হানিফ পদ্মা সেতুতে ওঠেন। ওই বাসের যাত্রী ইয়াসিন বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে পার হওয়া প্রথম বাসের যাত্রী হিসেবে অনেক খুশি আমি।’ পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি যে দূর হচ্ছে, সে কথাও তিনি বলেন।
সেতু ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথমদিন দুপুর পর্যন্ত যেসব গাড়ি সেতু পার হয়েছে, তার মধ্যে ৬০ শতাংশ ছিল মোটরসাইকেল। রবিবার বিকেলে জাজিরা প্রান্তে ছয়জন বাইকার একসঙ্গে এসেছেন সেতু পার হতে। টোলপ্লাজা থেকে সেতুর একটু ভেতরে ঢুকেই ভি চিহ্ন দেখিয়ে ছবি তোলেন তারা। তারা ঘুরতে এসেছেন বলে জানান। রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন হাসান। মাওয়া প্রান্তে টোল দিয়ে জাজিরা এসে আবার টোল দিয়ে ফিরে যান তিনি। জাজিরা প্রান্তে টোল দিয়ে বলেন, নতুন সেতু হলো, তাই ঘুরতে এসেছি। প্রয়োজনের তাগিদেও অনেকে সপ্তাহে কয়েকবার ঢাকা-মাওয়া-জাজিরা রুটে যাতায়াত করেন বলে জানান।
পদ্মা পাড়ি দিয়ে মাওয়ায় নাস্তা, খুলনায় ফিরে মধ্যাহ্নভোজ : জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনের পর ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় জমেছে পদ্মা সেতুতে। রবিবার বিভিন্ন স্থান থেকে দলবেঁধে বাস, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে এসেছেন পদ্মা সেতুতে। দলগতভাবে ছবি তুলছেন টোলপ্লাজা এলাকায়। এমনি একটি দলকে দেখা যায় মাওয়া টোলপ্লাজার কিছুটা সামনে। তারা এসেছিলেন একটি বীমা কোম্পানি থেকে। তাদের একজন শাহাবুদ্দিন হোসেন বলেন, খুলনা থেকে সকাল সাতটায় রওনা হন। মাত্র দুই ঘণ্টায় মাওয়া এসে পৌঁছেন। এখানে এসে নাস্তা করেছেন এবং গ্রুপ ছবি তুলে আবার খুলনায় গিয়ে দুপুরের খাবার খাবেন বলে জানান। টোল পরিশোধ করে পদ্মা সেতুর দিকে যাচ্ছিলেন ফারুকী সুরেশ্বরী নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘গত (শনিবার) রাতে ঘুমাতে পারিনি কখন সকালের আলো ফুটবে আর আমি ছুটে যাব পদ্মার বুক দিয়ে।’ ইউটিউবার রুবায়াত রুবা বলেন, সকালে মহাসড়কে গাড়ির চাপ ছিল। সব চাপ পেছনে ফেলে টোল পরিশোধ করে সেতুতে ওঠেন। সেতু ঘুরে শরীয়তপুরে যাবেন। আবার সেখান থেকে মাওয়া হয়ে ঢাকায়।
শরীয়তপুরে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু : রবিবার ভোর ৬টায় ইমা নামের একটি পরিবহন জাজিরা প্রান্তে টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পারপার হয়। পদ্মা সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলের শুরুতে যাত্রী ও চালকদের মধ্যে দেখা দেয় অভাবনীয় আনন্দ উচ্ছ্বাস। শরীয়তপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষের ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পদ্মা সেতু পারাপারের আনন্দে মেতে ওঠে। উঠতি বয়সের কিশোররা মোটরবাইক নিয়ে জাজিরা প্রান্তে টোলপ্লাজায় টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হয়ে মাওয়া প্রান্তে গিয়ে আবার টোল দিয়ে ঘুরে আসছে অনেকেই। এ যেন নতুন এক ধরনের উৎসবের আমেজে মেতেছে তারা। এ ছাড়া সুশৃঙ্খলভাবে সারি সারি গাড়ি লাইনে থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে রাজধানী ঢাকার দিকে রওয়ানা হচ্ছে তারা। এতদিন ফেরিতে যে ভোগান্তি হতো এখন আর সেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে না যাত্রীদের। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন যাত্রী ও চালকরা। কেউ কেউ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য স্মৃতিটুকু মুঠোফোনে বন্দী করছেন। টোলপ্লাজার সম্মুখে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ৬টায় পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে টোল প্রদান করে নিজে গাড়ি চালিয়ে পদ্মা সেতু পার হচ্ছিলেন বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়। কেমন অনভূতি লাগছে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, অভাবনীয় আনন্দ। যা ভাষায় প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ২৫ জুন উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই আর সহ্য হচ্ছে না কখন পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় যাব। তাই আজ সকালেই নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা যাচ্ছি। এরচেয়ে আনন্দ আর কি হতে পারে। এদিকে পদ্মা সেতুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে পদ্মা সেতুর ওপর জনসাধারণের পায়ে হেঁটে ওঠা নিষিদ্ধ করা হলেও পদ্মা সেতুর মাঝে গিয়ে নাট-বল্টু খুলে হাতে নিয়ে কিশোর ও যুবকদের টিকটক করা ও সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে সেতুর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাসহ নানা প্রশ্ন উঠেছে সুশীল সমাজে। বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের চায়ের দোকান, হোটেলসহ বিভিন্ন স্থানে লোকজনকে গল্পগুজব করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে পদ্মা দক্ষিণ থানার ওসি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আমরা পদ্মা সেতুর ওপর এখন অবস্থান করেছি। কে বা কারা উঠেছে তা আমার জানা নেই। প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরত্বের সেতুতে কে কোথা দিয়ে ওঠে তা কিভাবে বলব।
আজ থেকে পদ্মা সেতুতে ছবি তুললেই শাস্তি : পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে বেশ কিছু মোটরসাইকেলের চালককে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার শিকার প্রথম ব্যক্তির নাম আইয়ুব খান। মাথায় হেলমেট না পরায় তাকে ১০০ টাকা জরিমানা করা হয়। এ সময় আরও সাত চালককে ২০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়। রবিবার দুপুর ২টার দিকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজার সামনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা করেন জাজিরা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা। পদ্মা সেতুতে প্রথম জরিমানা দেয়া আইয়ুব খান জানান, তিনি মাদারীপুর থেকে সেতু দেখতে এসেছেন। সেতুর ওপর দিয়ে জাজিরা প্রান্ত থেকে মাওয়া প্রান্তে যাচ্ছিলেন তিনি। একটু এগোতেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি হন তিনি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা বলেন, হেলমেটবিহীন চালক ও আরোহীদের জরিমানা করা হয়েছে। আমরা আটজনকে জরিমানা করেছি। এদিকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের প্রথম দিনেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অনেকেই ছবি তুলছেন, টিকটক বানাচ্ছেন, হাঁটাহাঁটি করছেন। এমন পরিস্থিতি দেখে নতুন উদ্যোগ নিয়েছেন প্রশাসন। শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে হাবিবা ফারজানা জানান, সেতুতে উঠে ছবি, সেলফি কিংবা পদ্মা সেতুর ওপরে বসলেই জরিমানা করা হবে। রবিবার প্রথম দিন শিথিল থাকলেও সোমবার থেকেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ছাড়া নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে বাইক চালালেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। এদিন বিকেলে পদ্মা সেতুতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুল হাসান সুহেল। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাড়ি থেকে সেতুতে নেমে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। যারা পদ্মা সেতুতে গাড়ি থামিয়ে দাঁড়িয়েছেন বা হেঁটে পাড়ি দিচ্ছেন, যারা ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে এ সময় ব্যবস্থা নেয়া হয়।
প্রথম ৮ ঘণ্টায় পদ্মা সেতুতে ৮২ লাখ টাকা টোল আদায় : পদ্মা সেতুতে প্রথম ৮ ঘণ্টায় ৮২ লাখ ১৯ হাজার ৫০ টাকার টোল আদায় করা হয়েছে। এ সময় গাড়ি চলাচল করেছে ১৫ হাজার ২০০টি। রবিবার বিকেলে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হোসেন জানান। তিনি বলেন, ৮ ঘণ্টায় মাওয়া প্রান্তে ৮ হাজার ৪৩৮টি গাড়ি থেকে আয় ৪৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫০ টাকা। জাজিরা প্রান্তে ৬ হাজার ৭৬২টি গাড়ি থেকে আয় ৩৫ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকা। প্রকৌশলী আবুল হোসেন বলেন, সকাল থেকে যেসব গাড়ি চলাচল করেছে তার ৬০ শতাংশই মোটরসাইকেল। সে তুলনায় বড় যানবাহন কিছুটা কম। সেতুর টোলপ্লাজায় দায়িত্বরত এই কর্মকর্তা আরও বলেন, সকাল থেকেই আমরা প্রস্তুত ছিলাম। ৬টার আগেই আমরা যানচলাচলের জন্য কাজ শুরু করি।