পদ্মা সেতু হওয়ায় বিএনপির তৃণমূল খুশি ॥ তবে সিনিয়র নেতারা বিব্রত

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বপ্নের পদ্মা সেতু হওয়ায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা খুশি। তবে, রাজনৈতিক কারণে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বিব্রত। তারা অতীতে পদ্মা সেতু নিয়ে নেতিবাচক প্রচার চালানোর কারণে এখন বিব্রত হচ্ছেন। তাই কোন কোন সিনিয়র নেতা এ বিষয়ে রাজনৈতিক কারণে বৈরী মনোভাব প্রকাশ করলেও অধিকাংশ নেতা এ বিষয়ে চুপ রয়েছেন।
ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নিলে বিএনপি তখন কঠোর ভাষায় সরকারের সমালোচনা করে। আওয়ামী লীগ সরকার কখনও পদ্মা সেতু করতে পারবে না বলেও দলটির নেতারা বলেন। স্বয়ং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কখনোই পদ্মা সেতু করতে পারবে না। আর জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু করলেও তা ভেঙ্গে পড়বে। তাই কেউ এই সেতুতে উঠবেন না। খালেদা জিয়ার ওই নেতিবাচক বক্তব্যের জবাবে শনিবার পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়াকে বলব, আসুন দেখুন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না। তবে, প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, ২০০১ সালে এসে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে যাই। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। পরে আবার আমরা ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরু করি।
পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর সরকারী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বক্তব্য রাখলেও বিএনপি নেতারা এ বিষয়ে নেতিবাচক বক্তব্য রাখা শুরু করেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি বলেন, কোন ব্যক্তি বা দলের টাকায় নয়, পদ্মা সেতু জনগণের টাকায় নির্মিত হয়েছে। তার আগে তিনি বলেছিলেন, ভুল ডিজাইনে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে, তাই এ সেতু টিকবে না। অবশ্য এ ধরনের বক্তব্য রেখে তিনি এখন বিব্রত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, বিএনপি পদ্মা সেতু নিয়ে চরম বিরোধিতা করলেও সরকার এ দলটির ৭ সিনিয়র নেতাকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানায়। সাজাপ্রাপ্ত আসামি না হলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকেও দাওয়াত দেয়া হতো। এ পরিস্থিতিতে বিব্রত গত ২ দিন ধরে দলটির সিনিয়র নেতারা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য দেয়া থেকে কার্যত বিরত রয়েছেন। কেউ কেউ এ বিষয়ে কথা বললেও বেশি কিছু বলছেন না। আর আমন্ত্রণ রক্ষা করে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গেলে চরম বিরূপ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে বলে মনে করে বিএনপি নেতারা সেখানে যাননি। যদিও আমন্ত্রণ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা জানিয়েছিল ওই অনুষ্ঠানে যাবেন না।
তবে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বিব্রত হলেও পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় খুশি তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা। গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রাফিকুজ্জামান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাসহ সারাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাই আমি পদ্মা সেতু নির্মাণকে ইতিবাচকভাবে দেখি।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুরের শিবচর আসনে বিএনপির প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় পদ্মাপাড়ের মানুষ হিসেবে আমরা সবচেয়ে বেশি খুশি। কারণ, দীর্ঘদিন পদ্মা পার হতে গিয়ে আমাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
এদিকে বিএনপি নেতারা আমন্ত্রণ পেয়ে না গেলেও দলটির পরামর্শ দাতা হিসেবে পরিচিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরী হুইল চেয়ারে করে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যান। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। যেভাবে তার বাবাও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছিলেন ’৭১ সালের ৭ মার্চ। শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে জাতিকে পদ্মা সেতু উপহার দিয়েছেন। জাতি এতে গৌরবান্বিত। ইতিহাসে অনেক কিছু দেখেছি। মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি। আর এবার পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেখলাম। পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় বিএনপির পরামর্শ দাতা ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধুরীর মতো দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা খুশি হলেও রাজনৈতিক কারণে খোলা মনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারছেন না। তবে, বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা যে খুশি- তা অতিসম্প্রতি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কিছু নেতাকর্মীর বক্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে।