কাজিরবাজার ডেস্ক :
অবশেষে ঘটল প্রতীক্ষার অবসান। বাংলাদেশীদের জন্য খুলে গেল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের দুয়ার। গত চার মাসে রেকর্ড শ্রমিক বিদেশে গেলেও বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতে তারা যেতে পারেনি। গত ডিসেম্বরে শ্রমিক রফতানিতে দেশটির সঙ্গে নতুন চুক্তি হলেও নানা শর্তের বেড়াজালে তা কার্যকর হয়নি। মালয়েশিয়াতে ইন্দোনেশিয়ার পাম শ্রমিকদের পাঠানো বন্ধের দুইদিন পরই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার সবুজ সঙ্কেত মিলল। ২০১৮ সালে বন্ধের পর সেখানে শ্রমিক পাঠানো শুরু হলে বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের আর কোন সীমাবদ্ধতা থাকবে না। আগামী পাঁচ বছরে মালয়েশিয়া মোট পাঁচ লাখ কর্মী নেবে। প্রতি বছরে নেবে এক লাখ করে। গত চার মাসে মোট ৪ লাখ ২৬ হাজার ৫৫৮ শ্রমিক বাইরে গেছে, যা বিগত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৩৫ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি। সেই সঙ্গে জুন থেকে মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানো শুরু হলে চলতি বছরে শ্রম রফতানির নতুন রেকর্ড গড়বে বাংলাদেশ। সরকার এবার প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। প্রশিক্ষিতরা খরচের তুলনায় বেশি রেমিটেন্স আয় করতে পারবে এবং শ্রমবাজারে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা করছে সরকারী সংস্থাগুলো। মালয়েশিয়াসহ অন্য দেশে যেতে সরকারী নিবন্ধন এবং প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর প্রস্তাবিত প্রক্রিয়ার বিরোধিতা করছে রিক্রুটিং এজেন্সির নানা সংগঠন। ঠিক কবে থেকে শ্রমিক পাঠানো যাবে সেটি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে সেখানে শ্রমিক পাঠানোর আগে দ্রুতই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হবে বলে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্র জানিয়েছে। প্রশিক্ষণ ও নিবন্ধনের আগে কারও নিকট টাকা জমা দেয়া বা এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতেও নিষেধ করেছে সংস্থাটি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, চলতি মাস থেকেই মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানো শুরু হবে। বাংলাদেশ থেকে সবমিলে ১৫২০টি বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির নাম সেখানে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা যেহেতু লোক নেবে, তাই তারা কাদের মাধ্যমে নেবে সেই অধিকার তাদের রয়েছে। সমঝোতায় এজেন্সির সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। শ্রমিক সেখানে যেতে কত খরচ পড়বে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খরচের কথা সমঝোতায় উল্লেখ করা আছে। কিছু অংশ বাংলাদেশের প্রান্তে খরচ আছে সেটি কর্মীকে বহন করতে হবে। আর বিমান টিকেট থেকে শুরু করে বাদবাকি যাবতীয় খরচ নিয়োগকর্তার। আগের সমঝোতায় বিমান টিকেট একটি ছিল আর এখন আসা-যাওয়া দুটির খরচ নিয়োগকর্তার।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেছেন, মালয়েশিয়া পাঁচ বছরে পাঁচ লাখ কর্মী বাংলাদেশ থেকে নেবে। পাশাপাশি তারা ভবিষ্যতে নিরাপত্তা কর্মী ও গৃহকর্মী নিতে আগ্রহী। কর্মীর বেতন হবে ১৫০০ রিঙ্গিত।
বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শহিদুল আলম বলেছেন, দীর্ঘদিন পর মালয়েশিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে চলতি মাসেই। তবে সেখানে যাওয়ার আগে সর্বপ্রথমে শ্রমিকদের আগে নিজেকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে তাকে বিএমইটিতে নিবন্ধন করতে হবে। কারণ নিবন্ধন ছাড়া কোনভাবেই বিদেশে যাওয়া যাবে না। দুই ধাপ সফলভাবে শেষ করলে তৃতীয় পর্যায়ে তাকে এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এর আগে কোনভাবেই কাউকে টাকা পয়সা প্রদান বা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত হবে না। শ্রমিকরা বিদেশে যেতে চাইলে অবশ্যই নিবন্ধনের মাধ্যমে যেতে হবে।
শহিদুল আলম বলেন, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করা হচ্ছে। বেশি আয়ের জন্য দক্ষ শ্রমিকদের গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এজন্য প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা উন্নত দেশগুলোতে গিয়ে খরচের তুলনায় বেশি আয় করতে পারবে। গ্রিস, ইতালি এবং রোমানিয়ার মতো উন্নত দেশে নতুন করে শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, শ্রমিক নিয়োগে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট এবং ভোগান্তি এড়াতে অনলাইন ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে।
বিএমইটি’র মহাপরিচালক বলেন, শ্রমিকদের দক্ষ বানাতে ইতোমধ্যে দেশের ৭০টি কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ চলছে। শুধু রাজধানীতেই ৩টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলায় একটি করে কেন্দ্র রয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার চলতি বছরে রেকর্ড পরিমাণ শ্রমিক পাঠাতে চায়। তবে শুধু বিএমইটি কাজ করলেই চলবে না, পাসপোর্ট অধিদফতর এবং ব্যাংকগুলোকেও শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতে যথাসময়ে টাকার জোগান দিতে হবে।