বিদেশে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে চারকোল একটি দরকারি কাঁচামাল। এটি দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফেস ওয়াশ, ফটোকপিয়ারের কালি, পানির ফিল্টার, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং দাঁত পরিষ্কারের ওষুধসহ আরও কিছু আইটেম। আমাদের দেশেও চারকোলের (কাঠ কয়লা) বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মাগুরাসহ দেশের বেশ কিছু জেলার প্রায় ৪০টি কারখানায় ইতোমধ্যে চারকোল উৎপাদন শুরু হয়েছে। এছাড়া পাটকাঠিও চারকোল উৎপাদনের একটি উপায় হয়ে উঠেছে। এক দশক আগে দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠি থেকে এ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন শুরু হয়। ওই বছরই সর্বপ্রথম চীনে এ পণ্য রফতানি হয়। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩০ লাখ টন পাটকাঠি উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে যদি ৫০ ভাগ পাটকাঠি চারকোল উৎপাদনে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায় তবে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ চারকোল উৎপাদন সম্ভব হবে। নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় পাটকাঠিকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পোড়ানো, শীতলীকরণ ও সংকোচন করে চারকোল প্রস্তুত করা হয়। চারকোলে ৭৫ শতাংশ কার্বন থাকে।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চারকোলের চাহিদা রয়েছে। দেশে এ পণ্য উৎপাদনের ব্যাপ্তি বাড়লে আগামীতে জাপান, ব্রাজিল, তুর্কিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, দ. কোরিয়া, তাইওয়ান, কানাডা, মেক্সিকোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৭ হাজার ৭১ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন চারকোল রফতানি করে বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা আয় করছে। চারকোল উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে রফতানি আয় ও রাজস্ব বৃদ্ধি ছাড়াও প্রায় ২০ হাজার লোকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে।
সম্প্রতি সরকার পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রফতানিমুখী চারকোল শিল্প প্রতিষ্ঠায় ‘চারকোল নীতিমালা ২০২২’ প্রণয়ন করেছে। এটি সংশ্লিষ্টদের জন্য সুখবর। পাটখড়িসহ অন্য কোন উপকরণ দ্বারা চারকোল উৎপাদন ও সংশ্লিষ্ট শিল্পসমূহকে বিকশিত করার লক্ষ্যে এই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর লক্ষ্য ও পরিসর ব্যাপক। যার মধ্যে রয়েছে: প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের চারকোল উৎপাদন, বিপণন ও রফতানি বিষয়ে সহায়তা প্রদান; দক্ষ জনবল তৈরি; উৎপাদিত চারকোলের মান নিয়ন্ত্রণ, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে সহযোগিতা প্রদান; দেশী বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে সুযোগ সম্প্রসারণ এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা প্রদান; চারকোল রফতানিতে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারী প্রণোদনা প্রদান; চারকোল শিল্পের উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা; চারকোল শিল্পে প্রবৃদ্ধি অর্জনে দক্ষ, উপযুক্ত ও প্রতিযোগিতায় সক্ষম গতিশীল ব্যক্তিখাত সৃষ্টি; পরিবেশসম্মত উপায়ে চারকোল উৎপাদনে উৎসাহ প্রদান, ইত্যাদি। আমরা আশাবাদী এই নীতিমালার সঠিক প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও গতি আসবে।