ভোটগ্রহণের অত্যাধুনিক যন্ত্র ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) চমৎকার মেশিন বলে উল্লেখ করেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। বুধবার ইভিএম পরীক্ষা করে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, টেকনিক্যাল পয়েন্ট থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভার্চুয়ালি ম্যানুপুলেট বা কারসাজি করা অসম্ভব। অধ্যাপক এম কায়কোবাদও ইভিএম নিয়ে অনুরূপ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, ইভিএমের প্রত্যেকটা অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড করা হয়েছে যে, একজন ইচ্ছে করলেই সেটাকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। এটা খুবই একটা ভাল মেশিন তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আহ্বানেই প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ইভিএমের কারিগরি দিকগুলো যাচাই করে দেখেন। এরপর কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভা হয়।
দেশে বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএমের সফল প্রয়োগ প্রত্যক্ষ করেছে জাতি। বিগত সংসদ নির্বাচনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, খুলনা ও সাতক্ষীরার ছয়টি আসনের সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনেও এই ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। ইভিএমে এখন পর্যন্ত ভোট কারচুপির বড় ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ইভিএমে ভোটগ্রহণে ধীরগতিসহ ভোটারদের ভোগান্তির কিছু অভিযোগ অস্বীকার করা যাবে না। এছাড়া ইভিএম ব্যবহারের কারণে নির্বাচনী ব্যয় বৃদ্ধি, কাগজের ব্যালটের তুলনায় এ মেশিন ব্যবহারে বাড়তি জনবল নিয়োগের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। মেশিন সংরক্ষণের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বিপুল পরিমাণ নতুন মেশিন কিনতে হবে ভোট করতে হলে। তবে এসব প্রয়োজন বা জটিলতা নিরসন করা মোটেই কঠিন কিছু নয়। যেমন, ভোটগ্রহণে ধীরগতি কমানো যায় আঙুলের ছাপের বদলে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে।
তবে এটাও লক্ষ্যযোগ্য যে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণ হবে, নাকি ১০০ আসনে হবে, নাকি মোটেই হবে না- এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এমনটাই বক্তব্য নির্বাচন কমিশনের। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকেও আমন্ত্রণ জানাবে তাদের কারিগরি টিম নিয়ে ইভিএমের কার্যক্রম যাচাই করার জন্য। অর্থাৎ পুরো বিষয়টিই স্বচ্ছতার সঙ্গে করা হচ্ছে যা জনমনে আস্থা আনবে বলেই ধারণা করা যায়।
ইভিএমে কারচুপির সুযোগ রয়েছে বলে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, সেটা দূর করা সম্ভব। পছন্দের প্রার্থীকে দেয়া ভোট মেশিনের পাশাপাশি ছাপা কাগজেও যাতে সংরক্ষিত হয় এবং ভোটদাতা তার প্রমাণ পায়, সে ব্যবস্থা করা গেলে ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে, এমন অভিমত পর্যবেক্ষক মহলের। তবে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা ইভিএম নিয়ে অতিসম্প্রতি যে অভিমত দিলেন, তাতে আশা করা যায় ভোটাররা সন্তুষ্ট হওয়ার মতো উপাদান পাবেন। ইভিএম নিয়ে অহেতুক বিতর্কের অবসান হবে। মনে রাখা চাই, আধুনিক বিশ্বে ইভিএমের মাধ্যমেই ভোটগ্রহণ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার যৌক্তিকতা নেই।