দেশে ‘আঁতেল’ শ্রেণীর কিছু লোক আছে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে – প্রধানমন্ত্রী

32
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ সচিবালয় প্রান্তে যুক্ত হয়ে মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেউ অপপ্রচার করলে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, দেশে কিছু আঁতেল শ্রেণীর লোক আছে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কিছু হলেই বলে ওঠেন বাক স্বাধীনতা নাকি খর্ব হচ্ছে! সংঘাত সৃষ্টি করাও কী বাক স্বাধীনতা? সেটাই আমার প্রশ্ন।
তিনি বলেন, কেউ যদি অপপ্রচার করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এর প্রতিবাদটা আমাদের করতে হবে। আমরা চুপ করে বসে থাকলে হবে না, ডিফেন্সিভে গেলেও হবে না। যেটা সত্য সেটা বললে হয়তো সাময়িকভাবে কষ্ট হবে সেটা বিশ্বাস করাতে, কিন্তু এটা সফল হবেই- এটাই হলো বাস্তবতা।
সোমবার তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী সভার নিয়মিত বৈঠকের প্রারম্ভিক ভাষণে বাক স্বাধীনতার নামে কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমের অপপ্রচারের সমালোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এবং মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ সচিবালয়ের মন্ত্রী সভা কক্ষ থেকে ভার্চুয়াল এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। পরে মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি, দেশ সামনের দিকে এগিয়ে গেলে তাদের খুব কষ্ট হয়- এটা তো আমরা বুঝি। সামনে এগোতে গেলেই তখন এই শ্রেণীর মানুষদের খুব কষ্ট হয়। কিন্তু আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। নিজের পায়ে দাঁড়াব। তাদের (সমালোচক) যত কষ্টই হোক, দেশকে স্বনির্ভর করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
সরকার প্রধান তার বক্তব্যে আরও বলেন, যখনই বাংলাদেশ কোন ভাল জায়গায় যাবে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে আগাম আশঙ্কা ব্যক্ত করার পরও বাংলাদেশ তার থেকে এগিয়ে যাচ্ছে- এটা তাদের (তথাকথিত কিছু বুদ্ধিজীবী, সমালোচক) হয়তো পছন্দ হচ্ছে না। আমরা ভিক্ষুক হয়ে থাকব, তাদের কাছে হাত পাতব, চেয়ে খাব- এটাই তো তারা চাইবে। দেশকে সামনে যেতে গেলেই এই শ্রেণীটার খুব কষ্ট হয়। আর যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি তাদের তো আরও কষ্ট হয়। এটা তো আমরা বুঝি আর এটাই হলো বাস্তবতা। কিন্তু আমরা তা থাকব না। দেশ স্বাধীন করেছি, আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব।
মিথ্যা অপপ্রচারকারীদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই ধরনের একটা শ্রেণী তো রয়েছেই যারা সমাজকে বা সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, মানুষের জীবন নিয়েও তাদের চিন্তা নেই। কারণ তাদের একটা অন্য উদ্দেশ্য থাকে। তাদের কন্ট্রোল করতে গেলেই বা তারা তাদের ষড়যন্ত্রটা সফল করতে না পারলেই সমালোচনায় মুখর হয়। তিনি বলেন, যারা একটি সুন্দর পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য বক্তব্য দেবে তাদের ধরলে এটা বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, এটা তো হয় না। সবারই তো একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সারা পৃথিবীর মানুষও বলবে অপপ্রচারটা কখনও বাক স্বাধীনতা নয়, হতে পারে না। তবে এখন সোশ্যাল মিডিয়া, ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং ডিজিটাল যুগ- তাই যার যা খুশি বলে যাচ্ছে, যা খুশি অপপ্রচার করে যাচ্ছে। আবার তাদের কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হৈ চৈ এবং নানা কথা ছড়াবে। কিন্তু কি কারণে হচ্ছে সেটা তারা দেখছে না।
প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে আরও বলেন, আমাদেরও একটা দুর্বলতা রয়েছে। এটা নিয়ে (সংঘটিত আসল ঘটনা) কাউকে প্রশ্ন করলে কারণটা আর বলে না, তারা ডিফেন্সিভে চলে যায়। এই মানসিকতাটাও ভাল নয়। যেটা সত্য সেটা বলতেই হবে, স্পষ্ট করে বলতে হবে ওই লোকটা এভাবে সংঘাত সৃষ্টির চেষ্টা করেছে।
অতীতে কোটাবিরোধী আন্দোলনসহ ওই সময় নানা অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেশে সংঘাত সৃষ্টির অপচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিসিএসে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ব্যাগে কিন্তু বড় বড় পাথর, রামদা, কিরিচ-এগুলো থাকে, সেখানে তো বই-খাতা পাওয়া যায়নি। সেটা নিয়েও কোন কথা নেই। তখন তো এসব নিয়ে অনেক নিউজেও বের হয়েছে এবং অনেক ছবিও বের হয়েছে (মিডিয়া-পত্রিকায়)।
তিনি বলেন, ওই সময় মিথ্যা গুজব রটিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ ও পাথর ছুঁড়ে মেরে অফিস ভাংচুর এবং ৪০/৫০ নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। যাদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করাতে হয়েছে এবং কারও কারও চিকিৎসা এখনও চলছে। এটা নিয়েও কোন মাথাব্যথা করোর ছিল না। রাস্তায় নিজেরা আগুন জ্বালিয়ে অপপ্রচারের অভিযোগে যখন পুলিশ সেই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গেল সেটাই সব থেকে বড় হয়ে গেল! অথচ পিলখানায় বিজিবি গেটের সামনে গন্ডগোল করা হচ্ছিল, অনেকে বিজিবি গেট দিয়েও ঢুকে গিয়েছিল- সেখানে যদি বিজিবি গুলি চালাত তাহলে কী অবস্থা হতো?
প্রধানমন্ত্রী সে সময়কার অপর একটি উদাহরণ টেনে বলেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য একজন টিভি অভিনেত্রী মিথ্যা স্টেটমেন্ট (পরে আটক) দিয়ে বলল, তাকে নাকি আওয়ামী লীগ অফিসের পাশে নিয়ে মহিলাকর্মীরা অসম্মান করেছে! তার প্রচারিত ভিডিওতে রাস্তার সাইনবোর্ড দেখে ধরা পড়েছে যে, সে নিজেই রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে ভিডিও করে সমানে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার করেছে। তাই অপপ্রচারকারীদের সম্পর্কে সকলকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা শ্রেণী তো আছেই, যাদের চিন্তাটাই হলো এই ধরনের। অর্থাৎ সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। মানুষের জীবন নিয়ে তাদের কোন চিন্তাই নেই। ষড়যন্ত্র করে যখন সফল হতে পারে না তখনই সমালোচনামুখর হয়- এটাই হচ্ছে সব থেকে বাস্তব কথা। বাংলাদেশ এখন একটি ভাল জায়গায় আছে, আরও ভাল জায়গায় যাবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন ভাল। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যা ভবিষ্যদ্বাণী করছে সেটা নাকি ঠিক হচ্ছে না। আসলে বাংলাদেশ সবার চেয়ে বেশি এগিয়ে যাচ্ছে এটা তো তাদের পছন্দ হবে না। সামনে এগোতে গেলেই তখন এই শ্রেণীটার খুব কষ্ট হয়। এটা তো আমরা বুঝি।