কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্য, জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সঙ্গে বেড়েছে জাহাজের ভাড়াও। বেড়ে গেছে ডলারের দামও। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। এর চাপ গিয়ে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। কারণ, আমদানি যে হারে বেড়েছে, রফতানি ও রেমিটেন্স সে হারে বাড়েনি। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে জোগান দিতে হচ্ছে আমদানির খরচ। এ অবস্থায় চলতি হিসাবের লেনদেন ভারসাম্যে সবচেয়ে বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ৯ মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৪৯০ কোটি ৭০ লাখ) ডলার। বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ৪ হাজার ১৯০ কোটি মার্কিন ডলার। এই রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আবার আমদানি খরচ এভাবে বাড়তে থাকলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। আর্থিক খাতের এমন সঙ্কটে কঠোর নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে বিলাসপণ্য আমদানি ঠেকাতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডলারের সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারী কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের লাগাম টানা হয়েছে। এ ছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়ার কথাও ভাবছে সরকার। এজন্য সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সঙ্কট আরও বাড়ার আগে দ্রুত বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
করোনার পর সব ধরনের পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। সেই চাহিদার কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় আরও চড়ছে দাম। পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে নতুন উচ্চতায় উঠেছে। গত বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ৬০ ডলার। রবিবার সেই তেল ১১০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতে এর দর ১৩৯ ডলারে উঠে গিয়েছিল। ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ বেড়েছে ৮২ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ। শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। মহামারীর পর চাহিদা বাড়ায় জ্বালানি তেল ছাড়াও খাদ্যপণ্য (বিশেষ করে গম), ভোজ্যতেল, শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি), শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালসহ সব ধরনের জিনিসের দামই বেড়েছে। গত বছরের মার্চে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৮৫০ থেকে ৯০০ ডলার। বর্তমানে এই তেল ১ হাজার ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাই-মার্চ সময়ে মোট আমদানি ব্যয়ের ৭০ শতাংশের মতো খরচ হয়েছে রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও অন্য পণ্য আমদানিতে। একই সঙ্গে এ খাতে নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানিও বেড়েছে। তৈরি পোশাকের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে তুলা। গত বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ৩০ কাউন্ট মানের সুতার দাম ছিল ৩ ডলারের মতো। বছরের মাঝামাঝি সময়ে তা ৪ দশমিক ২০ থেকে ৪ দশমিক ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠে যায়। এখন তা ৪ দশমিক ১০ থেকে ৪ দশমিক ১৫ ডলারে নেমেছে।
জানতে চাইলে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমদানিতে বেশ চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। ব্যালান্স অব পেমেন্ট ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অস্থির হয়ে উঠেছে ডলারের বাজার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার বাজারে ছাড়া হয়েছে। কিন্তু আমদানি বাড়ায় তারপরও চাহিদা মিটছে না।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণভাবে অর্থনীতিতে আমদানি বাড়াকে ইতিবাচকভাবে দেখা হয়ে থাকে। বলা হয়, আমদানি বাড়লে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। এতদিন আমরাও সেটা বলে আসছি। কিন্তু এখন অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ৫০ শতাংশ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির ধাক্কা সামলানোর ক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির নেই। এখন এটা কমাতেই হবে। তা না হলে বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়ব আমরা।’
আহসান মনসুর বলেন, ‘দাম বাড়ায় সরকারের জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে গ্যাসে ভর্তুকি বেড়েছে, সারে বেড়েছে। বিদ্যুতে বেড়েছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার ভর্তুকি এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বাজেট ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের চাপ পড়বে।’
দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমাদের রফতানি আয় বাড়ছে। এটা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করতেই হবে আমাদের। এখন বিলাসবহুল ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য যাতে আমদানি না হয়, সেদিকে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ এ ব্যবসায়ী উদ্যোক্তার।
পাহাড়সম বাণিজ্য ঘাটতি : চলতি অর্থবছরের ৯ মাসেই (জুলাই-মার্চ) পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন (২ হাজার ৪৯০ কোটি ৭০ লাখ) ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের পুরো সময়ের (১২ মাস, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন) চেয়েও ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি। আর জুলাই-মার্চ সময়ের চেয়ে বেশি প্রায় ৬৪ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরের এই ৯ মাসে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৫ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। আর পুরো অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ২২ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোন বছর বা অর্থবছরে এত বিশাল অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি বাংলাদেশ। আর এর ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। জুলাই-মার্চ সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ১৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক মাত্র ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঘাটতি ছিল।
রফতানি বাড়ছে, রেমিটেন্স নিম্নমুখী : করোনার ধাক্কা কাটিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) পণ্য রফতানিতে বেশ ভাল করেছে বাংলাদেশ। তাতে দুই মাস বাকি থাকতেই চলতি অর্থবছরের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার কাছাকাছি পণ্য রফতানি হয়েছে। এই অর্থবছরে পণ্য রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে রফতানি হয়েছে ৪ হাজার ৩৩৪ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশ। তবে একই সময়ে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার মধ্যে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় সব রেমিটেন্স আয় বৈধ পথে দেশে এসেছিল। আর এখন ব্যাংকে ও খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য আট টাকা ছাড়িয়েছে, এ জন্য অবৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা আবারও বাড়ছে। আর বৈধ পথে কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-এপ্রিলে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১ হাজার ৭৩০ কোটি ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ২ হাজার ৬৬ কোটি ডলার।
রিজার্ভ বাঁচাতে কঠোর নিয়ন্ত্রণে সরকার : গত সপ্তাহ অনুষ্ঠিত ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা বলেছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সরকারী কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধ এবং কম গুরুত্বপূর্ণ আমদানিনির্ভর প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে দেয়া হবে। রিজার্ভ ব্যবহারেও আরও সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। বিশ্বের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে। বিশ্বের যে সামগ্রিক অবস্থা, তা বিবেচনায় নিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। এরপর সরকারী চাকরিজীবীদের বিদেশ সফরের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, সব ধরনের এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষা সফর, এপিএ ও ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ এবং কর্মশালা ও সেমিনারসহ সব ধরনের বিদেশ সফর বন্ধ থাকবে। পরিপত্রে আরও বলা হয়, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পনুরুদ্ধার এবং বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কট প্রেক্ষাপটে পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। এ আদেশ উন্নয়ন ও পরিচালনা বাজেট উভয় ক্ষেত্রে কার্যকর হবে। এছাড়া বাস্তবায়ন জরুরী নয়, ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের এমন সব প্রকল্পের তালিকা চেয়ে ইতোমধ্যে সকল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এতে প্রকল্পগুলোর বর্তমান বাস্তবায়ন পরিস্থিতি, প্রকল্পে কী পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ ব্যয় করতে হবে, বিদেশী অর্থায়ন আছে কিনা, থাকলে তার পরিমাণসহ বিভিন্ন তথ্য চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এছাড়া, আগামীতে মন্ত্রণালয়গুলো কোন ধরনের এবং কি কি প্রজেক্ট গ্রহণ করতে যাচ্ছে, সেগুলোতে কী পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের প্রয়োজন হবে, তার তথ্যও চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমাতে নতুন রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প আপাতত বাস্তবায়ন করা হবে না। ভবন নির্মাণ ও সংস্কার, বিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ স্থগিত রাখা হবে। কোভিডের শুরুতে আমরা প্রকল্পগুলোর তিনটি তালিকা করেছিলাম। কম অগ্রাধিকার প্রকল্প, মাঝারি অগ্রাধিকার প্রকল্প এবং অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর মধ্যে কম অগ্রাধিকারের তালিকায় প্রায় ২৪৭টি প্রকল্পে অর্থ ব্যয় স্থগিত করা হয়েছিল, মাঝারি অগ্রাধিকার প্রকল্পে শর্তসাপেক্ষে মোট বরাদ্দের ৫০ শতাংশ ব্যয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। সেই তালিকা পর্যালোচনা করে আমরা এখন নতুন তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি।’
আমদানি আরও কঠিন করল বাংলাদেশ ব্যাংক : দ্রুত বাড়তে থাকা চাহিদার বিপরীতে ডলার সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে অপেক্ষাকৃত কম প্রয়োজনীয় ও বিলাসী পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে আরও কড়াকড়ি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এখন থেকে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে নগদ মার্জিন হার বাড়িয়ে ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে নেয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এ পদক্ষেপে বিদেশ থেকে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, এসির মতো বিলাস পণ্য আমদানিতে এলসির মার্জিন হার তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে। জরুরী ও নিত্যপণ্য আমদানিতে মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত আগের নির্দেশনা বহাল থাকবে বলে সার্কুলারে বলা হয়েছে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের বলা হয়েছে। এর আগে গত ১১ এপ্রিলেই জরুরী ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে একদফা কড়াকড়ি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন এলসি খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়। আগে এ হার ব্যাংক তার গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে ঠিক করত। ব্যাংকগুলোকে দেয়া নতুন নির্দেশনায় বিলাসবহুল গাড়ি ও গৃহস্থালি পণ্যসামগ্রী আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বেশি কড়াকড়ি করা হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে সেডান কার বা এসইউভি-এর মতো মোটর গাড়ি এবং ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স হোম এ্যাপ্লায়েন্স আমদানিতে ঋণপত্র খুলতে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। অপরদিকে একই সার্কুলারে জরুরী ও সুনির্দিষ্ট খাতের কিছু পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্যের আমদানির বিপরীতে ঋণপত্র খুলতে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শর্তের বাইরে থাকবে শিশুখাদ্য, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, স্থাস্থ্য অধিদফতর স্বীকৃত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও সরঞ্জামসহ চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি, উৎপাদনমুখী স্থানীয় ও রফতানিমুখী শিল্পের জন্য সরাসরি আমদানিকৃত মূলধনী যন্ত্রাপাতি ও কাঁচামাল, কৃষি খাত সংশ্লিষ্ট পণ্য এবং সরকারী অগ্রাধিকার প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য আমদানি করা পণ্য। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, বিলাসী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটিই তার ফল। তিনি মনে করেন, দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে পরিচালিত হচ্ছে। যদিও জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সীমিত আয়ের মানুষের জন্য কষ্ট হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।