স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট বন বিভাগের সারি রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদ উদ্দিনের দুর্নীতি ও অবৈধ ক্ষমতার দাপটে নি:স্ব হয়ে পড়ছেন গোয়াইনঘাটের জাফলং মুসলিমনগর ও রাতারগুল মহেশখের এলাকাবাসী। রোববার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন জাফলং ও রাতারগুল মহেশখের এলাকার সাধারণ মানুষ। এই বিষয়ে সিলেটের বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও)সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে বারবার অভিযোগ দিয়ে কোন প্রতিকার পাননি বলেও জানান তারা।
এলাকাবাসীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ওই এলাকার গোলাম হোসেনের ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিলেট বন বিভাগের সারি রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদ উদ্দিন এক আতংকের নাম। বেশ কয়েকবছর আগে রেঞ্জ সাদ উদ্দিন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর অনেকের সাথে ব্যক্তিগত বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। গোয়াইনঘাট উপজেলার কুনকুড়ি গ্রামে নিজের বাড়ি হওয়ার সুবাদে এবং ১৯৯১ সালে চাকুরিতে তিনি যোগদানের পর শুধু ২০০৯ থেকে ২০১০ পর্যন্ত সুন্দরবনে ছিলেন। বর্তমানে ১১ বছর যাবত সিলেটে চাকুরিরত থাকায় সরকারি পদের ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে বন বিভাগে নিজস্ব একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন।
মিথ্যে মামলা করে হয়রানির অভিযোগ করে তিনি বলেন, ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের বিরুদ্ধে রাতারগুলের সাবেক বিট কর্মকর্তা প্রদীপ মন্ডলকে দিয়ে একে একে ৮টি মামলা দায়ের করান। যে মামলায় আসামী হন প্যারালাইসেস আক্রান্ত সাব্বির আহমদ, শিক্ষক মাওলানা বশির উদ্দিন, মাওলানা ছয়ফুল আলম, ক্যান্সার রোগী নজমুল ইসলাম, মৃত লন্ডন প্রবাসী মুকতার আহমদ, ইউপি মেম্বার আজিজুর রহমান, মানিক মিয়া, আমি নিজেসহ অনেক নিরপরাধ মানুষ। পরে মিথ্যে মামলা প্রমাণতি হওয়ায় আদালত আমাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করেন। একটি মামলার রায়ে বিচারক বলেন, ‘মিথ্যা উক্তিতে আসামীদের অত্র মামলায় জড়ানো হয়েছে। আসামীরা সম্পূর্ণ নির্দোষ।’ এতে প্রমাণ হয় সাদ উদ্দিন এলাকাবাসীকে কিভাবে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করছেন।
তিনি বলেন, এই বিষয়ে সিলেট বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলামের কাছে সত্যতা জানানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন এলাকাবাসী। সে যেকোন ভাবে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ফেলেন সাদ উদ্দিন। তার দুটি কিডনি নষ্টের অজুহাত দেখিয়ে অফিসকে ম্যানেজ করেন।
রেঞ্জ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাদাবাজীর অভিযোগ কওে তিনি আরও বলেন, সিলেট বন বিভাগের সারি রেঞ্জের অধিনস্ত রাতারগুলে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের প্রবেশের সময় সাদ উদ্দিন তার নিজেদের লোক অবৈধভাবে ইজারা ছাড়া সরকারি ভূমি থেকে মাথাপিছু ১১৫ টাকা নৌকা প্রতি আদায় করেন। যা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। শুধু তাই নয়, বহু বছর ধরে রাতারগুলের শত শত একর জমি বেদখলে আছে যা থেকে প্রতিমাসে ও বছরে নিয়মিত মাসোহারা আদায় করেন তিনি। রাতারগুলে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ভ্রমণ করতে আসেন। তারা স্থানীয় লোকদের নৌকা ভাড়া করে ভ্রমণ করেন। সাদ উদ্দিন ওইসব নৌকার মালিকদের কাছ থেকে নিয়মিত দৈনিক ও সাপ্তাহিক মাসোহারা আদায় করেন।
তিনি বলেন, শুধু তা-ই নয় সারি রেঞ্জের অধিনে জাফলং বিটের অধিনে বেশিরভাগ জায়গা বছরের পর বছর ধরে পাথর ক্রাশার মালিকদের কাছে বেদখলে রেখে মাসিক ও বছরভিত্তিক মাসোহারা নেন সাদ। কয়েকমাস আগে এক স্থানীয় সাংবাদিকের গোপন অনুসন্ধানি ভিডিওতে বেরিয়ে আসে এসব খবর। সাদ উদ্দিন দ্বারা ব্যবহার হওয়া বিট কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম এসব অপকর্ম করে ক্লোজড হয়েছিলেন। পরে সাদ উদ্দিন নিজ স্বার্থের জন্য জহিরুলকে আবারও খাদিমনগর বিটে যোগদান করান। বহু বছর ধরেই সাদ বন ও বনের জায়গা এভাবে দখল করে অবৈধভাবে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট্র কর্তৃপক্ষের কাছে সাদ উদ্দিনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা বশির উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, মানিক মিয়া, সামছুল ইসলাম, তাহের মিয়া, নুরুল আমিন, কাশেম আলী, আকাছ উদ্দিন, সুহেল তালুকদার, জীবন মিয়া ও ফয়জুর রহমান।