কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দারিদ্র্য অন্যতম বাধা উল্লেখ করে বলেছেন, আমাদের সরকার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একত্রে মিলে শিশু সুরক্ষায় কাজ করতে বদ্ধপরিকর। আমরা আমাদের শিশুদের মানোন্নয়নে সবকিছু করছি, যদিও আরও অনেককিছু করতে হবে। শিশুদের অধিকতর উন্নয়নে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউনিসেফের উদ্যোগে শিশুর সুরক্ষায় প্রথম জাতীয় সম্মেলন বাংলাদেশ-২০২২-এ প্রেরিত এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজমবিষয়ক মহাপরিচালকের উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট স্বাগত বক্তব্য রাখেন। আরও বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান রাষ্ট্রদূত চার্লস এবং অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহেদ মালেক, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এম তাজুল ইসলাম ও সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সব প্রতিবন্ধীর জন্য একটি জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল প্রণয়ন করেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সরকার এক কোটিরও বেশি মানুষকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। শিশুরাও এসব কর্মসূচীর উপকারভোগী। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করেছি। ৯৮ শতাংশ স্কুলগামী শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা গেছে। এ ছাড়া শিশু মৃত্যুহার ও মাতৃমৃত্যুহার কমিয়ে আনা হয়েছে। নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সারাদেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক ১৮ বছরের নিচে আর পাঁচ বছরের নিচে শিশুর সংখ্যা দুই কোটিরও বেশি। সরকারসহ উন্নয়ন সংস্থাগুলো এসব শিশুকে সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর সংক্ষিপ্ত সময়ে শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের সংবিধানের কয়েকটি ধারায় শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও শিশুদের উন্নয়নে আমার মেয়ে ড. সায়মা ওয়াজেদের কাজ বেশ প্রশংসনীয়। আমাদের সরকার ২০১৬ সালে ‘শিশু হেল্প লাইন ১০৯৮’ চালু করেছে। এই হেল্প লাইন ১০ লাখেরও বেশি শিশু ও তাদের পরিবারের কথা শুনেছে। থানাগুলো শিশুবান্ধব করার লক্ষ্যে চাইল্ড হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। একসময় শিশুশ্রম বাংলাদেশে অনেক বড় সমস্যা ছিল। আমাদের দেশে শিশুশ্রম উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা হয়েছে। রফতানিমুখী পোশাকশিল্প এখন শিশুশ্রমমুক্ত।
সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমরা আমাদের শিশুদের মানোন্নয়নে সবকিছু করছি, যদিও আরও অনেককিছু করতে হবে। শিশুদের অধিকতর উন্নয়নে একটি জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম একটি নিয়মিত কর্মসূচী হিসেবে চালু করা যেতে পারে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চালু করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একত্রে মিলে শিশু সুরক্ষায় কাজ করতে বদ্ধপরিকর। এ জাতীয় সম্মেলন আয়োজন করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ইউনিসেফকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
শিশুদের উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন-সায়মা ওয়াজেদ : সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি তাদের উন্নয়নে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজমবিষয়ক মহাপরিচালকের উপদেষ্টা সায়মা ওয়াজেদ।
তিনি বলেন, এখন পারিবারিক কাঠামো পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তারপরও শিশুদের প্রতি বিরূপ আচরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। শিশুদের জন্য আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে, শিশুরা আমাদের ভবিষ্যত সম্পদ। তাদের বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে। প্রত্যেক শিশু শিখতে পারবে যদি তাদের সাপোর্ট দেয়া যায়। শুধু বললেই হবে না, তাদের জন্য পরিবেশও তৈরি করে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কন্যা বলেন, শিশুদের উন্নয়নে বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেটি হয়, আমরা বিষয়টি উপলব্ধি করতে চাই না। শিশুদের খেলাধুলার উন্মুক্ত জায়গা প্রয়োজন, উন্মুক্ত জায়গা না থাকলে তারা কোথায় খেলবে? এসব তাদের উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। প্রত্যেক শিশুই সম্ভবনাময়। শিশুদের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে তাদের জন্য পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। শিশুরা পরিবেশ তৈরি করে না, তৈরি করি আমরা। সুতরাং আমাদের সচেতন হতে হবে। সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে পারলে শিশুরা দেশের সম্পদে পরিণত হবে।
সায়মা ওয়াজেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শিশুদের স্কুলে ভর্তিতে বাড়তি নজর দেয়া হয়েছে। এখন ৯৮ শতাংশ শিশু স্কুলে পড়ে। কিন্তু এখন মানসম্মত শিক্ষায় নজর দেয়া প্রয়োজন। অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে, সেদিকেও আমাদের নজর দিতে হবে। ক্লাসে স্মার্ট হলেই হবে না, তার মধ্যে মানবিক মূল্যবোধও তৈরি করতে হবে।