অর্থনৈতিক সংকটে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ শ্রীলঙ্কার শিশুদের

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
স্বাধীনতার পর গত বছরে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকটে পড়ে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। সাবেক রাষ্ট্রপতি গোতাবায়ার পদত্যাগ করে দেশত্যাগ, দেশজুড়ে গণবিক্ষোভ আর জ্বালানি, খাদ্যসহ নানা প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট, সবশেষে অর্থের অভাবে বন্ধের পথে শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়া। এখনো সংকট সামলে উঠতে পারেনি দেশটি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, শ্রীলঙ্কান অভিভাবকরা তাদের একাধিক সন্তানকে বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারছে না। কারো তিনটি ছেলেমেয়ে থাকলে শুধু একজনকে শিক্ষা লাভের সুযোগ দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে পিতা-মাতাদের।
ছয়মাস আগে দেশটিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা কিছুটা ফিরলেও অর্থনৈতিক সংকট এখনো রয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটির গণ বেকারত্ব এবং নাটকীয় মূল্যবৃদ্ধির সম্পূর্ণ প্রভাব এখন অনেক পরিবারের মধ্যে দৃশ্যমান।
দশবছরের শিশু মালকি, তার মা প্রিয়ন্তি তাকে পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করছে আতশবাজি বিক্রি থেকে উপার্জিত অর্থের সাহায্যে। কিন্তু এই আয় পরিবারের সার্বিক ব্যয় মেটাতে সক্ষম নয়। তাই প্রিয়ন্তি বাধ্য হয়ে তার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করানোর বদলে কাজের দিকে ধাবিত করছে মুধু বেশি উপার্জনের জন্য।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কায় খাদ্যের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং মুদ্রাস্ফীতি সর্বকালের সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কিছুদিন ধরে মালকির পরিবারের কারো পেটে জুটেনি খাবার।
দেশটির স্কুলগুলোতে শিক্ষাগ্রহণ বিনামূল্যে হলেও বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয় না। সেইসাথে ইউনিফর্ম এবং পরিবহনের খরচ যোগ করলে, শিক্ষা একটি বিলাসবহুল প্রক্রিয়া যেটা প্রিয়ন্তিকার মতো পরিবারের পক্ষে বহনযোগ্য না। তার মতে, শিশুদের স্কুলে পাঠাতে হলে প্রতিদিন মাথাপিছু প্রায়
তিনি বলেন, যদি তারা স্কুলে ফিরে যেতে চায় তার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪০০ রুপি প্রয়োজন। অথচ সংকটের আগে প্রতিটা শিশুই বিদ্যালয়ে যেত।
সরকার স্কুলগুলোতে চাল বিতরণ করেছে বলে জানিয়েছে। কিন্তু বিবিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করা বেশ কয়েকটি স্কুল বলছে তারা কোনো সাহায্য পায়নি। শিক্ষকরা বলছেন, বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আগের থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
শিক্ষক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জোসেফ স্ট্যালিন সিলন বলেন, খরচের কারণে শিক্ষা ছেড়ে দেওয়া পরিবারের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সম্পর্কে সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে অসচেতন। আমাদের শিক্ষকরাই খালি লাঞ্চ বক্স নিয়ে আসেন। এই অর্থনৈতিক সংকটের প্রকৃত শিকার শিশুরা। সরকার এই ইস্যুটির উত্তর খুঁজছে না। এটি শ্রীলঙ্কা সরকারের পরিবর্তে ইউনিসেফ এবং অন্যরা দেখেছে এবং শনাক্ত করেছে।’
ইউনিসেফ বলেছে, সামনের মাসগুলিতে শ্রীলঙ্কানরা নিজেদের খাবার জোগাতেই হিমশিম খাবে। চালের মতো মৌলিক পণ্যের মূল্যস্ফীতি সাধারণ পরিবারগুলিকে ক্রমেই পঙ্গু করে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আগামীতে শিশুদের স্কুলে আসা যে আরও বেশি করে বন্ধ হবে আমরা সেটা প্রত্যাশা করতেই পারি।
সরকার পরিস্থিতি পরিচালনা করতে আপাতদৃষ্টিতে অক্ষম হওয়ায় দাতব্য সংস্থাগুলিকে পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। সমতা সরনা নামের একটি খ্রিস্টান দাতব্য প্রতিষ্ঠান তিন দশক ধরে কলম্বোর সবচেয়ে দরিদ্রদের সাহায্য করে আসছে। তারা বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল ক্ষুধার্ত শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিপূর্ণ।
যদিও দাতব্য সংস্থাটি প্রতিদিন প্রায় ২০০ শিশুকে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু তারা যে পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সেটা খুবই।
বর্তামানে বেঁচে থাকার সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে প্রিয়ন্তি বলেন, ‘আমরা যদি আজকের খাবার জোগাড় করতে পারি, তাহলে আগামীকালের খাবার কীভাবে জোগাড় করব তা নিয়েই দুশ্চিন্তায় থাকি। এটাই এখন আমাদের জীবন।’