কাজিরবাজার ডেস্ক :
অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নেয়ার জন্য একটি নতুন সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে দেশটির বিক্ষোভকারীরা। দেশটির একটি প্রধান বাণিজ্য গোষ্ঠীও বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অন্যদিকে সিলোন চেম্বার অব কমার্সসহ ব্যবসায়ীদের কয়েকটি শীর্ষ সংগঠন এবং শ্রীলঙ্কার চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউট বুধবার এক যুক্ত বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেছেন। তারা অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আহবান জানান। এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত নৌবাহিনীর ঘাঁটিতেই সপরিবারে থাকবেন শ্রীলঙ্কার সদ্য পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তার ছেলে নামাল রাজাপাকসে জানিয়েছেন, বাবা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে যে গুজব ছড়িয়েছে, তা সত্য নয়। সোমবার দিনভর সহিংসতায় আটজন নিহত ও প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগের পরদিন মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে সহিংসতা বন্ধ করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এর মধ্যে এক রাতেই বিক্ষোভের আগুনে পুড়েছে শ্রীলঙ্কার অন্তত ৩৩ সংসদ সদস্যের বাসভবন।
এদিকে শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠানোর খবরকে মিডিয়ার কল্পনা বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশন বুধবার এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে। বিবৃতিতে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে ভারতীয় সৈন্য মোতায়েনের খবরকে স্রেফ গুজব বলে দাবি করে তিনি বলেছেন যে নয়াদিল্লী কলম্বোয় গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন করছে।
শ্রীলঙ্কার ফ্রন্টলাইন সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা দুমিন্দা নাগামুয়া দাবি করেন যে, শ্রীলঙ্কার জনগণকে উসকে দিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের দেখামাত্রই গুলি করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তবে এমন দাবি অস্বীকার করেছেন দেশটির প্রতিরক্ষা প্রধান ও সেনা কমান্ডার জেনারেল শাভেন্দ্র সিলভা।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় মঙ্গলবার রাতেও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। রাজধানী কলম্বোর নিকটবর্তী একটি শহর নেগোম্বোতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বহু ঘরবাড়িসহ সরকারী স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে দেশটিতে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছেলের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল রিসোর্টেও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। কার্ফু জারি থাকা সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার মানুষের এমন বিক্ষোভ এর আগে কখনও দেখেনি কেউ। সহিংসতা ও প্রতিশোধমূলক কর্মকান্ড থামাতে শ্রীলঙ্কার জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে।
দেশজুড়ে অব্যাহত সহিংসতার ঘটনায় এমন আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। বিদ্যমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলারও অঙ্গীকার করেছেন গোতাবায়া। টুইটারে দেয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, সাংবিধানিক ম্যান্ডেটের মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে ঐকমত্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের যাবতীয় উদ্যোগ নেয়া হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট আরও সহিংসতা প্রতিরোধে শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। কার্ফু সত্ত্বেও মঙ্গলবার কলম্বোতে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এদিন জনতা কলম্বোর সবচেয়ে সিনিয়র পুলিশ সদস্যকে বহনকারী একটি গাড়িতে হামলা চালায়। এক পর্যায়ে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সতর্কীকরণ গুলি চালায় পুলিশ।