কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগের মতো করোনাভাইরাসের মহামারি নিয়ে নেই বিধিনিষেধ, ভিসাও দিচ্ছে ভারত। আর এবার ঈদের ছুটিও লম্বা। দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর দেশে ভারতের ভিসা সেন্টারগুলোতে উপচে পড়া ভিড়। পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ঈদের ছুটিতে কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষ ভারতে বেড়াতে যাবেন।
মহামারির কারণে ২ বছর ভারতে পর্যটন ভিসা বন্ধ ছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে ভিসা দেওয়া শুরু করেছে ভারত। এবার নানা কারণে ঈদের সময়ে ৯ দিন টানা ছুটি কাটানোর সুযোগ আছে। ফলে অনেকেই লম্বা ছুটিতে দেশের বাইরে বেড়াতে যেতে আগ্রহী। সহজে ভিসাপ্রাপ্তি, কম সময় যাওয়া-আসা, অল্প খরচের কারণে অনেকের প্রথম পছন্দ ভারত।
গত এক সপ্তাহ ধরে ভিসা আবেদনকারীদের চাপ বেড়েছে ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলোতে। অনেককে রাত থেকে লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। চাপ সামলাতে জনবল ও অফিস সময় বাড়িয়েছে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র। বন্ধের দিনগুলোতেও ভিসা আবেদনকারীদের জন্য কার্যক্রম চালু রেখেছে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্র। আগে প্রতিদিন বেলা ১টা পর্যন্ত ভিসা আবেদন গ্রহণ করা হতো। তবে চাপ বাড়ায় ভিসাকেন্দ্র সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা হচ্ছে। কাউন্টারে জনবল বাড়ানো হয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলায়ও ভিসা সেন্টারে বাড়তি চাপ রয়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পর্যটক গেছে প্রায় ২২ লাখ। মূলত কম খরচে মানসম্পন্ন চিকিৎসা, ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ ও কেনাকাটার জন্য বাংলাদেশিরা ভারতে যান। একইসঙ্গে ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা পর্যটনবান্ধব হওয়ায় পর্যটকদের আগ্রহ বেশি। ভারতে চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে আকাশপথে ফ্লাইটের ভাড়া। অনেকে খরচ কমাতে ভ্রমণ করবেন সড়কপথে। ইতোমধ্যে পর্যটকদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের হোটেলগুলোর ভাড়াও বেড়েছে। ঈদের সময় সীমান্তগুলোতে মানুষের অনেক চাপ বাড়বে। গাড়ি ভাড়াও বাড়বে।
এবার ঈদে ভারতে বেড়াতে যাবেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুই মাস আগে কলকাতায় গিয়েছিলাম। তখন যে রুমের ভাড়া ছিল ১২শ টাকা, এখন সেই রুমের ভাড়া ৪ হাজার হয়ে গেছে।
এবার রোজা ৩০টি হলে ঈদ হবে ৩ মে মঙ্গলবার। ফলে ঈদের ছুটি ২ মে থেকে শুরু হয়ে শেষ হবে ৪ মে বুধবার। অন্যদিকে ১ মে রবিবার শ্রমিক দিবসে সরকারি ছুটি। আর আগের দিন ৩০ এপ্রিল শনিবার, ২৯ এপ্রিল শুক্রবার। ফলে ২৯ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত টানা ৬ দিনের ছুটি। অন্যদিকে ঈদের ছুটির পর ৫ মে বৃহস্পতিবার। তারপর ৬ ও ৭ মে (শুক্র ও শনিবার) সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে চাকরিজীবীরা ৫ মে একদিন ছুটি পেলে মোট ৯ দিন ছুটি কাটাতে পারবেন ঈদে।
বাংলাদেশ আউট বাউন্ড ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম কাদির বলেন, গত দুই বছর ধরে মানুষ বেড়াতে পারেনি। এবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। ফলে সবাই দেশের বাইরে বেড়াতে যেতে আগ্রহী। কিন্তু করোনায় আর্থিক অবস্থা অনেকের আগের মতো নেই। এজন্য অনেকেই কম খরচে আশপাশের দেশে যাবেন। ভারত আমাদের দেশের মানুষের জন্য প্রথম পছন্দ। এখন হাজার হাজার মানুষ ভিসার জন্য প্রতিদিন আবেদন করছেন। সঠিক পরিসংখ্যান নেই, তবে ঈদের ছুটিতে ৫ লাখের বেশি মানুষ ভারতে যেতে পারে।
গোলাম কাদির বলেন, মানুষের চাহিদা থাকায় ইতোমধ্যে বিমান ভাড়া বেড়ে গেছে। ভারতেও অভ্যন্তরীণ পর্যটক আছে, বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা যাবেন, যার কারণে সেখানে আগের চেয়ে খরচও বেড়েছে।
ঈদের ছুটিতে ভারতের সিকিম যাবেন রাকিব হোসেন। তিনি বলেন, আমার অনেক দিনের ইচ্ছে কোথাও বেড়াতে যাবো। ভারত কাছের দেশ, খরচও কম। তাই ৪ বন্ধু মিলে সিকিম যাবো ঈদের ছুটিতে।
ভারতের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপ-মহাপরিচালক ও রিজিওনাল পরিচালক (পূর্ব) সাগ্নিক চৌধুরী বলেন, ভারতের পর্যটকদের একটি বড় অংশ বাংলাদেশ থেকে আসেন। যেকোনও ছুটিতে বাংলাদেশিরা বেড়াতে আসেন। এবার ঈদের ছুটিতে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশিরা আসবেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও পর্যটনবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আমরা সবসময় কাজ করছি।