কাজিরবাজার ডেস্ক :
৮৭৯ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন হবে আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন হতে যাওয়া পাঁচ বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলো হবিগঞ্জের বিবিয়ানা ৩৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রামের জুলদায় ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-২, মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাঘারহাটের মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সিলেটে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২২৫ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উন্নীতকরণ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ হলেও এ রকম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিভাগ মাইলফলক ছুঁতে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্রের মতে, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর সরকার ২০২১ সাল পর্যন্ত সফলতার সঙ্গে ১১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে যার উৎপাদন ক্ষমতা ২০,২৯৩ মেগাওয়াট। এই সময়ে সঞ্চালন লাইন বাড়ানো হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৬ কিলোমিটার। গ্রিড সাবস্টেশন বেড়েছে ৩৬ হাজার ৮০৯ এমভিএ। বিতরণ লাইন বাড়ানো হয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার কিলোমিটার। এই সময় আমদানি হয়েছে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৯.৫০ শতাংশ। বেড়েছে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন। ২০০৯ সালে যেখানে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা সেখানে বর্তমানে তাই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬০ কিলোওয়াট ঘণ্টায়। বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা ১ কোটি ৮ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৯ লাখে। আগে যেখানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ২ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা সেখানে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৫৬ কোটি টাকায়। তবে এই সময় সিস্টেম লস কমেছে বহুগুণে। ২০০৯ সালে যেখানে বিদ্যুৎ বিতরণে সিস্টেম লস ছিল ১৪.৩৩ শতাংশ সেখানে তা কমেছে ৫.৮৫ শতাংশ।
নতুন করে উদ্বোধন হতে যাওয়া এই কেন্দ্রগুলো থেকে ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আনুষ্ঠানিকতা হয়নি এতদিন তাই ঘোষণা দেয়া হয়নি। করোনার কারণে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের সময় দিতে পারেননি গত বছর। তাই এখন উদ্বোধন হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে ২৪,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। এর মধ্যেই আমরা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছি। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা এখন ২৫,২৩৫ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে (ক্যাপটিভ বিদ্যুৎসহ), যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ৪,৯৪২ মেগাওয়াট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও গতিশীল নেতৃত্বের কারণে আমরা প্রায় ৯৯.৫ শতাংশ জনসংখ্যাকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনতে পেরেছি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গত ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে এবং দেশের সার্বিক উন্নয়নে এই সেক্টরের গুরুত্ব বিবেচনায় অগ্রাধিকার দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের আন্তরিক ও নিরলস প্রচেষ্টায় মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫৬০ কিলোওয়াটে পৌঁছেছে, যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ২২০ কিলোওয়াট এবং সিস্টেম লস ১৪.৩৩ শতাংশ থেকে ৮.৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেই উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করে। ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে তৈরি করা হয় সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ। এরই সুফল আজ ভোগ করছে দেশবাসী।
উদ্বোধন হতে যাওয়া প্রকল্পগুলো সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, কন্সট্রাকশন অব বিবিয়ানা-২, ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প থেকে নিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ৪০০ মেগাওয়াট। জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন (জেবিআইসি) এবং এমইউএফজি ব্যাংক লিঃ জাপানের যৌথ অর্থায়নে ৩৭.৪০ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৫ সালের ৩০ জুন। যা কার্যকর হয় ২০১৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। এখান থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। এছাড়া আপগ্রেডেশন অব সিলেট ১৫০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্ট টু ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি প্রকল্পটি সিলেটের কুমারগাঁও এলাকায় বাস্তবায়িত হয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি থেকে নিট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে ২৩১.২৯ মেগাওয়াট। ১১.৩১ একর ভূমিতে গড়ে ওঠা এই প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৭ সালের ২৬ নবেম্বর আর চুক্তি কার্যকর হয় ২০১৮ সালের ১৫ মার্চের থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ২০২০ সালের ১৪ মার্চ। প্রায় ১২.৮৬ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা মেঘনাঘাট ১০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১০৪ মেগাওয়াট। ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেড এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। এর চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি। বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় ২০২০ সালের ৩০ জুন থেকে। এছাড়া চট্টগ্রামের জুলদায় একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিসেস ইউনিট-২ লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে জুলদা ১০০ মেগাওয়াট এইচএফওভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (ইউনিট-২)। প্রায় ৮ একর জমির ওপর স্থাপিত এই কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১০০ মেগাওয়াট। ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এর চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ২০২০ সালের ২০ মার্চ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয়। আর বাঘারহাটের মধুমতি ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে ১০৫ মেগাওয়াট।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ স্লোগান সামনে রেখেই শতভাগ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার যে বিশাল কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছে তার সফল বাস্তবায়ন করতে নিরলস কাজও করে চলেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ সংশ্লিষ্টরা। দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া এখন আর স্বপ্ন নয়। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাসেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নের পথে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কারণে এখন আর আগের মতো গ্যাস নিয়েও নেই কোন অভিযোগ।