কাজিরবাজার ডেস্ক :
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে আন্তর্জাতিক জ্বালানির বাজার টালমাটাল হয়ে উঠেছে। চিন্তার ভাজ পড়েছে দেশের নীতি নির্ধারকদের কপালে। গত কয়েক দিনের ব্যবধানে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে হয়েছে ১০০ ডলার। তেলের দামের ওপর ভিত্তি করে কয়লা এবং এলএনজির দর নির্ধারিত হওয়ায় ভবিষ্যতে এসব জ্বালানির দামেও বড় হেরফেরের শঙ্কা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশে গ্যাস ঘাটতির কারণে এলএনজি আমদানি বাড়াতে হচ্ছে। সরকার মনে করছে চলতি বছরই দৈনিক ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট করে আমদানি করা এলএনজি গ্রিডে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে ভর্তুকির হিসেব নিকেশে বড় পার্থক্য হতে পারে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøলাদিমির পুতিনের ইউক্রেনে সামরিক অভিযান ঘোষণার পর, ২০১৪ সালের পর এবারই অপরিশোধিত তেলের রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। ইউরোপে এ যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে। এশিয়াতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের (৪২ মার্কিন গ্যালন বা ১৫৯ ব্রিটিশ লিটার) দাম বেড়ে ১০১ দশমিক ৩৪ ডলারে উঠেছে। এর আগে সবচেয়ে বেশি ছিল ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ১০১ দশমিক ২০ ডলার। গত বছরের ১ ডিসেম্বর অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল প্রতি ব্যারেলে ৬৮ দশমিক ৮৭ ডলার। যা এখন বেড়ে প্রতি ব্যারেলে ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ গত দেড় মাসে অশোধিত তেলের দাম সর্বনিম্ন স্তর থেকে ৪০ শতাংশ বেড়েছে।
প্রসঙ্গত, রাশিয়া বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। ইউরোপের বাজারে তারা প্রধানত অপরিশোধিত তেল বিক্রি করে।
এদিকে বিপিসি জানায়, ডিজেলে এখন লিটার প্রতি ৮ থেকে ৯ টাকা গুনছে বিপিসি। সংকট আরও ঘনীভূত হলে তেলের দাম আরও বাড়তে পারে। এতে লোকসান আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে বিপিসি। তবে এই মুহূর্তে দাম বাড়ানোর অবস্থায় নেই বাংলাদেশ। কারণ গত ৩ নভেম্বর ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। অর্থাৎ প্রতি লিটারে বাড়িয়েছে ১৫ টাকা। যা ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়।
সে সময় দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে।বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ডিজেল লিটারপ্রতি ১৩.০১ এবং ফার্নেস অয়েল লিটারপ্রতি ৬.২১ টাকা কমে বিক্রি করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় সংস্থার মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার শুধু ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের জ্বালানি তেলের উচ্চ দামের প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। এক কথায় ত্রাহি অবস্থা আমাদের। গত তিন চার মাস আমরা কম দামে তেল আমদানি করতে পেরেছিলাম। ডিজেলে প্রতিদিন আমাদের ১৪ থেকে ১৫ কোটিরও বেশি টাকা লোকসান হচ্ছে। লিটার প্রতি প্রায় ৮ থেকে ৯ টাকা লোকসান দিচ্ছে বিপিসি। এছাড়া অন্য জ্বালানি তেলে লোকসান দিচ্ছে। তবে ফার্নেস ও জেট ফুয়েল যেহেতু আমরা মূল্য সমন্বয় করতে পারি সেহেতু সে জ্বালানি তেলের লোকসান হয়তো কমিয়ে আনা যাবে। জেট ফুয়েলে কিছুটা লাভ করছি।
তিনি জানান, ডিজেলের ক্ষেত্রে কদিন আগেই যেহেতু দাম বাড়ানো হয়েছে সেহেতু এখন কী করা হবে তা আমরা জানি না। তবে আমাদের লোকসান বাড়ছে। রাশিয়া আর ইউক্রেনের এই যুদ্ধ যদি বেশিদিন চলে তাহলে দাম আরও বাড়ার শঙ্কাও রয়েছে। এদিক উদ্ধৃত অর্থ হিসেবে ৫ হাজার কোটি টাকা অর্থ বিভাগে জমা দিতে হবে বিপিসিকে। গত দুই বছরে দশ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি আমরা। এই উদ্ধৃত টাকাটা যদি তারা আপাতত না নিতো তাহলে হয়তো এই লোকসান কিছুটা কমানো সম্ভব।