করোনা মহামারির মধ্যেও গত বছর শিশু ধর্ষণ ২৩.৪৭, খুন ২১.৭৬ শতাংশ বেড়েছে

7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বেশির ভাগ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং দেশে করোনা বিধিনিষেধ থাকার মধ্যেই গত বছর শিশু ধর্ষণ বেড়েছে সাড়ে ২৩ শতাংশ। এই সময়ে শিশু হত্যার ঘটনা বেড়েছে পৌনে ২১ শতাংশ। পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে তিন গুণ।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১’ শিরোনামে শিশুবিষয়ক সংবাদের কনটেন্ট বিশ্লেষণ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার এমজেএফের জ্যেষ্ঠ কো-অর্ডিনেটর (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শাহানা হুদা রঞ্জনার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
পাঁচটি জাতীয় বাংলা দৈনিক প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাক, যুগান্তর ও সমকাল এবং তিনটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার, নিউএজ ও ঢাকা ট্রিবিউনে প্রকাশিত শিশু অধিকারবিষয়ক সংবাদ পর্যালোচনা করে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।
আজ সকালে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১’ শিরোনামে শিশুবিষয়ক সংবাদের আধেয়-বিশ্লেষণে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও শিশুদের জনসমাগমে অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ৮১৮ জন শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আগের বছর ২০২০ সালে শিশু ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৬২৬। এই হিসাবে গত এক বছরে শিশু ধর্ষণের হার বেড়েছে ২৩.৪৭ শতাংশ।
তাতে আরও বলা হয়, গত বছর ৯৪ জন শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে ১৪ জন মেয়ে শিশু। এ ছাড়া যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে ১১০ শিশু।
পরিচিতজনের কাছে অধিকাংশ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। পরিবারের পরিচিত ও প্রতিবেশীদের হাতে শিশুদের একটি বড় অংশ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুর সর্বনিম্ন বয়স দুই বছর। এ ক্ষেত্রে শিশুদের কোনো কিছু দেওয়ার লোভ দেখিয়ে নিয়ে ধর্ষণ করা হচ্ছে। কিশোরীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে প্রেম করতে গিয়ে। স্কুল ও মাদরাসাছাত্রীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে শিক্ষক ও মাদরাসা শিক্ষকদের হাতে।
গত বছর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ১৮৩ জন শিশু ও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে ১৩৫ জনকে। আগের বছর ২০২০ সালে হত্যার শিকার হয়েছিল ১৪৫ জন শিশু। সেই হিসাবে এক বছরে শিশু খুনের ঘটনা বেড়েছে ২১.৭৬ শতাংশ।
এমজেএফের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছর ৬৯ জন শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। ২০২০ সালে এ সংখ্যা ছিল ১৫৮। সড়ক দুর্ঘটনা ও অন্যান্য দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা ২০২০ সালের চেয়ে গত বছর কম ছিল।
আত্মহত্যার সংখ্যাও গত বছর কমেছে। বিভিন্ন কারণে ৭৮ জন শিশু আত্মহত্যা করেছে, যার মধ্যে ৫৭ জন ছেলে ও ২১ জন মেয়ে। ২০২০ সালে আত্মহত্যাকারী শিশুর সংখ্যা ছিল ৩৪। ওই বছর আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয় ২৩ জন।
গত বছর নানা ধরনের নির্যাতনে আহত হয়েছে ২৫৪ জন শিশু। হারিয়ে গেছে ৩৮ জন। ৫৭০ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা গেছে। ২০২০ সালে পানিতে ডুবে মৃত্যু হয় ১৬৫ জনের। নিখোঁজ হয়েছে ৩৮ শিশু। ২০২০ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয় ২২ জন শিশু।
২০২০ সালের চেয়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে তিন গুণের বেশি। গত বছর ৫৬টি ঘটনার মাধ্যমে ২৫৪ জন শিশু নির্যাতনের কথা প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালে শিশু নির্যাতনের ১৬টি ঘটনা ঘটে। শিশুকে নিয়ে ২৫টি বিষয়ের ওপর নেতিবাচক খবর ছাপা হয়েছে ১ হাজার ৯৩০টি, আর ইতিবাচক সংবাদ ছাপা হয়েছে ১২টি বিষয়ের ওপর ১০৬টি।
এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শিশু ও সমন্বয় উইং) মুহিবুজ্জামান ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি মাহবুবা বিলকিস। সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ শিশু পরিস্থিতি ২০২১-এর সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন এমজেএফের কো-অর্ডিনেটর রাফেজা শাহীন।
নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, শিশু ধর্ষণ ও শিশুকে যৌন হয়রানি বন্ধের জন্য সবাইকে এখনই জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। না হলে এর হার আরও বাড়তে থাকবে। শিশু সুরক্ষায় নিয়োজিত সরকারি প্রতিষ্ঠানের সবাইকে আরও বেশি সহৃদয়বান হওয়ার পাশাপাশি শিশু অধিকার রক্ষায় সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান শাহীন আনাম।