স্টাফ রিপোর্টার :
স্বার্থান্বেষী মহলের রোষানলে পড়ে চরম হয়রানি ও মানহানীর শিকার হয়েছেন সিলেটের একজন বাউল শিল্পী। পরিকল্পিতভাবে ভুয়া ফেইসবুক আইডি থেকে অপপ্রচার চালিয়ে হেয় করার পাশাপাশি মিথ্যা মামলায় তাকে কারাবরণও করতে হয়েছে।
শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এসব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ধরাধরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বাউল কল্যাণ সমিতি সিলেটের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন রাসেল। তিনি উপজেলার তেতলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।
লিখিত বক্তব্যে মো. কামাল উদ্দিন রাসেল বলেন, ‘২০০৭ সাল থেকে সুস্থ ধারার সংগীতচর্চা এবং সিলেটের ঐতিহ্য বাউল গান যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও মরমি সাধকদের সৃষ্টি সংগীতগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ করছি। বাউল শিল্পীদের দুঃসময়ে সবার আগে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। কিন্তু, পরিতাপের বিষয় একপি কুচক্রী মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে নিঃশে^স করার হীন চেষ্টায় মত্ত।’
তিনি বলেন, ‘গত বছর কথিত বাউল শিল্পী ঢাকার বাসিন্দা দেওয়ান শাবান আজমির ঢাকার চকবাজার থানায় সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। ইতোমধ্যে এ মামলায় আমি গ্রেপ্তার হয়ে পরে জামিনে বের হয়ে এসেছি। কোনোধরনের অপরাধ না করেও এমন ঘটনার শিকার হয়ে আমি চরমভাবে বিপর্যস্ত ও মারাত্মক সম্মানহানির শিকার হয়েছি।’
রাসেল জানান, এর আগে ২০১৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার ‘কথিত’ বাউল শিল্পী দেওয়ান শাবান আজমিরের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে প্রথম যোগাযোগ হয় রাসেলের। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী আজমান আলী নিজের ভাগনি বলে পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু গত বছরের ১৯ এপ্রিল শাবানা আজমির সিলেটে নগরের সাগরদিঘীরপাড়ের একটি বাসায় ধর্ষিত হয়েছেন বলে একমাস পর জানতে পারেন তিনি। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ধরাধরপুরের জনৈক বাবুল মিয়ার নাম ছিল। তবে, এ নামে গ্রামে কেউ তিনি চিনেন না বলে জানান রাসেল।
পরিচয় জানতে ধর্ষণের ঘটনা উল্লেখ করে ছবিসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন বাউল কামাল উদ্দিন রাসেল। স্ট্যাটাস দেখে ফোন করে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন শাবানা আজমির।
রাসেল বলেন, ‘আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে দেশ-বিদেশের একটি বড় চক্রের সহযোগিতায় শাবানা আজমির গত ৩ জুন ঢাকার চকবাজার থানায় প্রথমে সাধারণ ডায়েরি করলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সত্যতা পাননি। পরবর্তীতে ফেসবুকে আমার নামে ফেইক আইডি খুলে একটি মেয়ের ছবি (মুখ ঢাকা) দিয়ে ‘আমার দেশ-বিদেশের সকল সুস্থ আছে লিখে পোস্ট দেয়।’ যার সূত্র ধরে রাসেলের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং পরবর্তীতে র্যাব সিলেট থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, ‘আমি নাকি শাবানাকে ফোন করে কু-প্রস্তাব দিয়েছি। এমনটি হয়ে থাকলে মামলার আইও কললিস্ট সংগ্রহ করে যথার্থ প্রমাণ বের করতে পারে।’ ভুয়া ফেইসবুক আইডি খোলার রহস্য উদঘাটনেরও দাবি জানান রাসেল।
এর আগে, সংগঠনের সদস্য গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা গীতিকার দুখী রুবেলের এক গান বিকৃতির ঘটনাাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথপুর উপজেলার জহিরপুর তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা যুক্তরাজ্য প্রবাসী শেখ মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয় বলে জানান রাসেল। শাবান আজমিরের মামলার বিষয়ে মোফাজ্জলের যোগসূত্র রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এই চক্রের সব কুকর্মের তথ্য উদঘাটন এবং অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আরকুম শাহ মাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী হাজী হারুনুর রশীদ, বলদী বহুমুখী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা কামাল, বিশিষ্ট মুরব্বী খায়রুল ইসলাম, শাহাবুল আহমদ, বাউল নুনু গাজী ও শিপলু মিয়া।