কাজিরবাজার ডেস্ক :
এক দফার আন্দোলন নিয়ে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের অনশনে ‘বেদনার্ত’ শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, তাদের সমস্যা সমাধানে আলোচনার জন্য আমি প্রস্তুত আছি। তারা যখনই চাইবে তখনই আলোচনায় বসব।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অচলাবস্থা নিরসন এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকায় নিজ বাসভবনে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের দাবির বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, একজন উপাচার্য চলে গেলে তো আরেকজন আসবেন। কিন্তু সমস্যাই যদি থেকে যায় তাহলে তো কোনো লাভ হলো না।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের অষ্টম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বুধবার ভোরে ক্যাম্পাসে পৌঁছে অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভেঙে তাদের দাবি পূরণে সরকারের পক্ষে আশ্বাস দেন।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত সাত দিন ধরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। পুলিশি অ্যাকশন হয়েছে, সাধারণ শিক্ষার্থী অনেকে আহত হয়েছেন। তারপরে আন্দোলনটি এক দফায় পরিণত হয়। শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করে। অষ্টম দিন জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অনশন ভঙ্গ করান। আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানেরা যে অনশন করবেন এটা আমাদের উৎকণ্ঠিত করেছে, কষ্ট দিয়েছে, আমাদেরকে বেদনার্ত করেছে। আমরা সব সময় তাদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে সহানুভূতিশীল ছিলাম ও থাকব। কারণ তারাও আমাদের সস্তান। তাদের ভালোমন্দ আমাদের দেখা দায়িত্ব।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আন্দোলনের সময় কিছু মামলা হয়েছে। আমরা সামনের দিকে এগোতে চাই। কাজেই পেছনে যা কিছু ঘটেছে সেগুলো থাকবে কেন। আইনি বিবাদে পড়াশোনার ওপরে ভবিষ্যতে কোনো ফলাফল বা প্রভাব থাকবে না। কাজেই মামলা থাকবে না। কোনো অসুবিধা নেই। সমস্যা যখন সমাধান হয়ে যাচ্ছে, তাদের সাথে কথা বলে… আশা করি এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। কোনো সমস্যা থাকবে না। যারা কর্তৃপক্ষ আছেন তাদের সাথে কথা বলবো। আমাদের শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ধরনের সমস্যা যেন না হয় আমরা সেটা নিশ্চিত করব।
ডা. দীপু মনি বলেন, এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের সমস্যা সুষ্ঠুভাবে দেখার একটা সুযোগ পেলাম। সমস্যাগুলো শুধু শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় নয়, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আছে। হলগুলো নিয়ে সমস্যা, খাবার নিয়ে সমস্যা, আমরা সে সমস্যা সমাধান করতে চাই।
তিনি বলেন, আশা করছি, তারা এখন অবরোধ তুলে নেবে। আমরা তাদের যত অভিযোগ আছে, সমস্ত ঘটনা প্রবাহ খতিয়ে দেখে যারা জড়িত থাকবে, যাদের অবহেলা-ত্রুটি থাকবে, তিনি যেই হোন না কেন আমরা ব্যবস্থা নেব।
খতিয়ে দেখতে কত দিন সময় লাগবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা দুই- এক দিনের মধ্যে… তারা যদি চায় হলে ফিরে এসে বসবে। ওদের সাথে বসতে চাই। আলাপ আলোচনা যতক্ষণ না হবে, ততক্ষণ সঙ্কট থাকবে। আমি সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি, যে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি তা হচ্ছে আন্দোলন করবে না। যে সমস্যা আছে, তা সমাধান করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যে সমস্যা সেগুলো শুধু শাহজালালে আছে তা নয়। এগুলো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে। সমস্যাগুলো সমাধান করে যাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুষ্ঠুভাবে চলে, আমাদের সেটা দেখতে হবে। সেখানে যাতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে অনেক ভাঙচুর হয়, অনেক ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। সেজন্য তারা নিশ্চয়ই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে একটা পর্যায়ে গিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় তখন এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভিন্ন দিকে চলে যায় কি না, সেটা নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে, যে কারণে কয়েকটি দফার আন্দোলন হঠাৎ করে এক দফায় পরিণত হলো, এই সময়ে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব। সেখানে কারও যদি ত্রুটি-বিচ্যুতি- অবহেলা থাকে তার সবকিছুই খতিয়ে দেখা হবে। তিনি যেই হন না কেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা শারীরিকভাবে বা মানসিকভাবে একটা পর্যুদস্ত অবস্থায় আছে। তারা যে সময়ে আমাদের সঙ্গে বসতে চায়, তারা বসতে পারবে। ওরা যখন চাইবে তখনই বসব। আমি তো রেডি আছি। আমি ফোনেও কয়েকবার কথা বলেছি। ওরা যদি এখনই চায় বসব, যদি বলে কয়েকদিন পর তখন বসব।
আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এটা মূল সমস্যার বহিঃপ্রকাশ। আমরা মূল সমস্যাটা দেখতে চাই। প্রশাসন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী আমরা সবাই একদিকে, আমাদের কোনো পক্ষ-বিপক্ষ নেই। আমরা সবাই মিলে সমস্যা সমাধান করব। আমাদের সন্তানেরা অনশন করবে না, এটা আমাদের জন্য একটা বড় স্বস্তি। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে তাদের সমর্থন নিয়েই সমস্যার সমাধান করা হবে। আশা করছি খুব শিগিগিরই সমস্যা সমাধান হবে।
উপাচার্য অপসারণে একদফা নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন উপাচার্য থাকলেন কী থাকলেন না, সেটি কিন্তু তাদের সমস্যা সমাধানে তার প্রভাব থাকছে না। একজন উপাচার্য চলে গেলে তো আরেকজন আসবেন। কিন্তু সমস্যাই যদি থেকে গেল তাহলে তো তাদের কোনো লাভ হলো না। আমরা সমস্যা সমাধান করব। উপাচার্যের বিষয়ে একটা পদ্ধতি আছে, চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছে দায়িত্ব ন্যাস্ত করা। সেটা ভিন্ন বিষয়। আর এ ব্যাপারে আমরা দেখব আমাদের পক্ষে কী করা সম্ভব।