বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা টানা চার দিন ছিল বায়ুদূষণের তালিকার শীর্ষে। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান যাচাই বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ এর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বলছে, এই সময় ঢাকার বাযুদূষণের যে পরিমাণ ছিল তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। ঢাকাবাসী রয়েছে ভয়াবহ ‘রেড এলার্ট’-এর মধ্যে। বায়ুদূষণ এভাবে চলতে থাকলে শ্বাসতন্ত্রের রোগ অনেক বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, ক্যান্সারের মতো রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকবে। বায়ুদূষণে উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কমে যাচ্ছে অক্সিজেন সরবরাহ।
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত কম থাকায় দূষণের পরিমাণও থাকে বেশি। শুস্ক বাতাসে ধূলিকণা সহজে উড়তে পারে। মহানগরীতে চলছে মেট্রোরেল, এক্সপ্রেসওয়ের মতো নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড। বায়ুদূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণের কোন ব্যবস্থা আমাদের নেই। রাজধানীর দূষণ বৃদ্ধির নানা কারণের মধ্যে রয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক অবস্থান এবং অধিক জনসংখ্যা। সমন্বয়হীনভাবে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, গাড়ির কালো ধোঁয়া, ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন মনোক্সাইড, ইটভাঁটি ও শিল্প কারখানা, উন্মুক্ত আবর্জনা পোড়ানো, বস্তি এলাকার বর্জ্য পোড়ানো এবং আন্তঃদেশীয় বায়ুদূষণের প্রভাবেও দূষণের পরিমাণ বাড়ছে ঢাকায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পরমাণু শক্তিকেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের ক্লার্কসন বিশ্ববিদ্যালয় ও রচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা যৌথভাবে একটি গবেষণায় বলেছেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ আন্তঃদেশীয় বায়ুপ্রবাহ। ইরান, মঙ্গোলিয়া, আফগানিস্তানের শুষ্ক মরু অঞ্চল থেকে ধূলিকণা বাতাসে মিশে যায়। পশ্চিমা লঘুচাপের মাধ্যমে ওই ধূলিকণাসহ বাতাস প্রবেশ করে ভারতে। নবেম্বর থেকে ওই দূষিত বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাতারাতি এই দূষণ বন্ধ করার সোজা কোন রাস্তা নেই। বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করে দূষণ কমাতে হবে ধীরে ধীরে। এজন্য কিছু নিয়ম, কিছু পরিকল্পনা এবং সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। শহর থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন সরাতে হবে। বাড়াতে হবে মেট্রোরেল ও ইলেকট্রিক গাড়ির মতো বিকল্প জ্বালানির পরিবহন। নির্মাণ কাজ থেকে যাতে ধূলিকণা বাতাসে ছড়াতে না পারে এজন্য আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হবে সকল বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত গতিতে। বর্জ্য থেকে দূষণ ছড়ানো বন্ধ করতে শিল্প কারাখানায় ব্যবহার করতে হবে উন্নত ইটিপি প্রযুক্তি। শহরের আশপাশে থেকে সরাতে হবে ইটভাঁটি। বাসা বাড়িতে ব্যবহার করতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত রান্না ঘর। ঢাকায় প্রচুর ফায়ার ব্রিগেড স্টেশন রয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ফায়ার ব্রিগেড কাজে লাগিয়ে রাস্তায় নিয়মিত পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা যায়। এতে বায়ুদূষণ অনেকটাই কমে যাবে। রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলোরও পরিচর্যা হবে এবং বৃদ্ধি পাবে অক্সিজেন সরবরাহ।